ভালো অভ্যাসের মাঝে বই পড়ার অভ্যাসকে অবশ্যই প্রথম সারিতে রাখতে হবে। ‘ডেইলি ডোজ অব রিডিং’ বা প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাসটি শুধু জ্ঞান বৃদ্ধিতে নয়, সাহায্য করবে স্মৃতিশক্তি, স্বাস্থ্য ও সম্পর্ক উন্নতিতেও।
যান্ত্রিক এই সময়ে কাগুজে বই পড়ার অভ্যাসটি হারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। ট্যাব কিংবা মোবাইলেই পড়ে নেওয়া যাচ্ছে সদ্য প্রকাশিত কিংবা বহু পুরনো বই। অথচ প্রতিদিন শরীরচর্চা করা, সবজি ও ফল খাওয়ার মতো বই পড়ার অভ্যাসটিও মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। আজকের ফিচারে তুলে ধরা হলো বই পড়ার কয়েকটি উপকারিতার কথা, যা বই পড়ার প্রতি আপনাকে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করবে।
প্রায় এক দশক হয়ে হওয়া মার্কিন যুক্তরাজ্যের সোসাইটি ফোর রিসার্চ ইন চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট এর গবেষণাপ্রাপ্ত তথ্য জানাচ্ছে, যে সকল শিশুদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাসটি রয়েছে, তাদের বুদ্ধিমত্তা ক্ষেত্র বিশেষে প্রাপ্তবয়স্কদের চাইতেও বেশি হয়।
মানসিক চাপ ও অস্থিরতার সময় কোনকিছুতেই মন বসে না। এ সময়ে বই পড়া খুব ভালো কাজে দিবে। ২০০৯ সালের একটি গবেষণা জানাচ্ছে, ৩০ মিনিট বই পড়া থেকে ৩০ মিনিট ইয়োগা করার উপকারিতা পাওয়া যাবে। এছাড়াও ইউনিভার্সিটি অফ সাসেক্স এর গবেষকেরা দেখেছেন প্রতিদিন মাত্র ৬ মিনিটের বই পড়ার ফলে ৬৮ শতাংশ মানসিক চাপ কমে যায়।
মাতৃভাষা কিংবা পরদেশি ভাষাকে ভালোভাবে শেখার জন্য ও জানার জন্য বই পড়ার কোন বিকল্প নেই একেবারেই। ১৯৯০ সালের একটি পরীক্ষামূলক সার্ভে থেকে দেখা গেছে- যাদের প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস রয়েছে, তাদের শব্দ সম্পর্কে ধারণা ও জ্ঞান অন্যান্যদের চাইতে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা ১২-৫০ বছর বয়সী কয়েক শত মানুষের উপর পরীক্ষা করে দেখলেন, যাদের মাঝে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট বই পড়ার সুঅভ্যাসটি আছে তাদের আয়ু, যারা ম্যাগাজিন কিংবা খবরের কাগজ পড়ে তাদের চাইতে সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে।
নিত্যদিন বই পড়ার অভ্যাসটি শুধু আইকিউ এর মাত্রা নয়, বৃদ্ধি করে অনুভূতিশীলতাও। ২০১৩ সালের হার্ভাডের একটি গবেষণার তথ্য জানাচ্ছে, কাল্পনিক কাহিনী ও চরিত্রের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলার ফলে খুব সহজেই সেই অনুভূতিগুলোকে আত্মস্থ করা সম্ভব হয়। এতে করে নিজের মাঝে অনুভূতিগুলো কে অনুভব করা সম্ভব হয় খুব সহজেই এবং বৃদ্ধি পায় অনুভূতিশীলতা।
সন্তানদের সাথে ঘরের কাজ করা, একসাথে খাবার খাওয়া কিংবা টিভি দেখার চাইতেও, তাদের সাথে নিয়ে বই পড়া হলে সম্পর্কের উপর সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়। এমনকি এই অভ্যাসটি গড়ে তুললে নিজ থেকে বুঝতে পারবেন পার্থক্য।