মোটাদের নানাভাবে খোঁটা দেওয়ার প্রচলনটি শুধু আমাদের দেশে নয়, পুরো বিশ্বজুড়েই রয়েছে। কিন্তু এই ফ্যাট শেমিং বা মোটা মানুষদের কটুক্তি করা, তাদের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করে কি? নাকি ফ্যাট শেমিং মোটা হওয়ার প্রক্রিয়াকে আরও বেশি সুগম করে তোলে!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টকশোয়ের উপস্থাপক বিল ম্যাহের তার অনুষ্ঠানে ফ্যাট শেমিংকে ‘মেকিং অ্যা কামব্যাক’ উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ যারা ফ্যাট শেমিং এর শিকার হয়ে থাকে তারা এই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে ওজন কমাতে পারে। বাস্তবে কি সেটা হয়? ম্যাহের এমন কথার জবাবে আরেকজন উপস্থাপক জেমস কর্ডেন খুব চমৎকার ও যুক্তিসংগত উত্তর দিয়েছেন।
‘এটা খুব পরিষ্কারভাবেই প্রমাণিত যে, ফ্যাট শেমিং শুধুমাত্র একটি কাজই করে। এটা একজনকে লজ্জিত করে এবং এই লজ্জা মানুষকে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি ও সেলফ-ডেস্ট্রাকটিভ আচরণের দিকে ঠেলে দেয়। যার ফলস্বরূপ সে বেশি খাওয়া শুরু করে। তাছাড়া মোটা মানুষদেরকে ব্যঙ্গ করে কথা বলার ফলে যদি ওদের ওজন কমানো সহজ হতো, তাহলে স্কুলেই কোন মোটা শিক্ষার্থী থাকতো না’, একদম সহজভাবে এই কথাগুলো বলেন কর্ডেন।
ইউনিভার্সিটি অব সারির হেলথ সাইকোলজির প্রফেসর জেইন অগ ডেন বিবিসিকে বলেন, ‘নিন্দা করা একটি প্রক্রিয়াকে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়। বেশ কিছু ঘটনা প্রমাণ করে যে ফ্যাট শেমিং মানুষের মাঝে খারাপ লাগা তৈরি করে প্রবলভাবে। যা তাদের আত্মবিশ্বাসকে কমিয়ে দেয়, ভেঙে দেয়। এতে করে ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি অনেক বেড়ে যায় এবং নিজের খারাপলাগাকে কমানোর জন্য আরও বেশি খাবার খেয়ে ফেলে।’
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিহাভিয়ারাল সায়েন্টিস্টদের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, ওজন কমানোর জন্য ইতিবাচক ও ভালোভাবে অনুপ্রাণিত করার বদলে ফ্যাট শেমিং করার ফলে তারা ওজন আরও বাড়িয়ে ফেলে।
এবারে চলুন বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কথা একপাশে রেখে সাধারণ একজনের নিজস্ব কথা জানা যাক। নিউ ইয়র্কের ফ্লোরিডায় বেড়ে ওঠা ১৯ বছর ভিক্টোরিয়া আব্রাহাম ম্যাহেরের বক্তব্যর সাথে একেবারেই একমত নন। বরং কর্ডেনের সাথে এক সুরে সুর মিলিয়ে তিনি বলেছে, ‘একদম ছোটবেলা থেকে আমি আমার বাড়তি ওজন নিয়ে বাজে কথা শুনে এসেছি, কুৎসিত মন্তব্য শুনেছি। ছোটবেলায় যখন স্কুল থেকে ফেরার পথে অন্যরা আমাকে বাজে কথা বলতো, তখন বাসায় এসেই খাবার নিয়ে বসে পড়তাম নিজেকে ভালো বোধ করানোর জন্য। তারা আমার জন্য চিন্তা করে বা আমাকে কেয়ার করে বলে এই খারাপ মন্তব্যগুলো করতো সেটা নয়। তারা আমার শরীর নিয়ে আমাকে খারাপ বোধ করানোর জন্যই ওই মন্তব্যগুলো করতো। যারা আমার জন্য কেয়ার করে তারা হলেন আমার বাবা-মা ও আমার চিকিৎসক। তারাই আমার জন্য কোনটি সঠিক ও কোনটি উচিত সেটা বলেন।’
এদিকে লজ অ্যাঞ্জেলেসে বসবাসকারী ২৫ বছর বয়সী উইল ম্যাভিটি জানান তার জীবনের গল্পটি। অনেক বেশি মোটা ছিলেন বলে সবাই বাজে কথা বলত, নিন্দা করতো। ফলে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে প্রায় না খেয়ে ও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি শরীরচর্চা করে ওজন কমায় সে। না খেয়ে থাকার ফলে তার এখন ইটিং ডিসঅর্ডার দেখা দিয়েছে এবং অতিরিক্ত শরিরচর্চার ফলে নানা ধরনের ইনজুরি হয়েছে তার।
সকল কিছু বিবেচনা করে বলা যায়, ফ্যাট শেমিং কোনভাবেই কোন ক্ষেত্রেই একজনের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে না। বরং সঠিক তথ্য ও তার আলোচনাই পারে একজন মোটা ব্যক্তির বাড়তি ওজনকে কমিয়ে আনতে।
আরও পড়ুন: ফোবিয়া: ভীতি যেখানে গ্রাস করে সবকিছু