প্রতিটি কাজেই এখন প্রয়োজন ইন্টারনেট। একটাদিনও ইন্টারনেটবিহীনভাবে কাটানো অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। কিন্তু প্রতিটি জিনিসের দুইটি বিপরীত দিক থাকে- উপকারিতা ও অপকারিতা। একদিকে যেমন ইন্টারনেট কাজের গতিকে বেগবান ও সহজ করেছে, ঠিক তেমনিভাবে তৈরি করেছে আসক্তি।
প্রয়োজনের চাইতে অতিরিক্ত সময় ইন্টারনেটে কাটানোকে বলা হচ্ছে ইন্টারনেট আসক্তি। গেমস, পর্ন, অনলাইন শপিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পড়ে থাকা, ভিডিও দেখা ইত্যাদি কাজে ইন্টারনেটের জগতে সময় কাটানোর মাধ্যমে এই আসক্তি তৈরি হয়।
এই আসক্তির ফলে নিজের ব্যক্তিগত জীবন, কর্মক্ষেত্রসহ, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে পুরো বিশ্বজুড়েই এই আসক্তি অ্যালার্মিং অবস্থায় রয়েছে এবং কিশোর থেকে তরুণদের মাঝে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
ইন্টারনেট অ্যাডিকশন বা আসক্তি শনাক্তকরণের জন্য মূলত পাঁচটি লক্ষণকে দেখা হয়ে থাকে একজনের মাঝে।
১. ইন্টারনেটে খুব বেশি সময় দিবে। ইন্টারনেটে আগে কী ঘটেছে এবং সামনে কী ঘটতে চলেছে তার প্রতি প্রয়োজনের চাইতে বেশি গুরুত্ব আরোপ করবে।
২. নিজের শান্তির জন্য প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা ও সময় বৃদ্ধি করবে।
৩. ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়েও অকৃতকার্য হবে।
৪. যখনই ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা কমানোর চেষ্টা করবে, বিষণ্ণতা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, অস্থিরতায় ভোগার মতো সমস্যাগুলো দেখা দিবে।
৫. ইন্টারনেটে সে নিজে যতটুকু সময় থাকতে চায়, নিজের অজান্তেই তাঁর চাইতে বেশি সময় কাটিয়ে ফেলবে।
কোন আসক্তিই জীবনে ভালো কোন ফল বয়ে আনে না। একইভাবে ইন্টারনেট আসক্তি থেকেও দেখা দেওয়া শুরু করবে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো-
১. পড়ালেখা, ক্যারিয়ার, সম্পর্কসহ ব্যক্তিগত সব ক্ষেত্রেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
২. ইন্টারনেটে আরও কিছুটা বেশি সময় কাটানোর জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া শুরু করা।
৩. কোন সমস্যার সমাধান না করে, সমস্যাটি থেকে পালানোর জন্য ইন্টারনেটকে বেছে নেওয়া। এতে করে সমস্যার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাওয়া।
৪. ইন্টারনেটে প্রয়োজনের অধিক সময় পার করার ফলে সামাজিকতা রক্ষার দক্ষতা কমে যাওয়া। মানুষের সাথে মেলামেশা, পরিচিত হওয়া, সৌজন্য সাক্ষাতমূলক কথাবার্তা বলাতেও অনাগ্রহ চলে আসা।
৫. একইস্থানে দীর্ঘ সময় বসে থাকা, একই ভঙ্গীতে গ্যাজেট (কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাব) ব্যবহার করায় হাড়ের গঠনে সমস্যা দেখা দেওয়া।
ইন্টারনেট আসক্তি দূর করার ক্ষেত্রে একেকজনের জন্য একেক পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে। অনেকের ক্ষেত্রেই ইন্টারনেট আসক্তির পেছনে অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, মেন্টাল স্ট্রেসের সমস্যা লুকায়িত থাকে। এমনটা হলে সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে এরপর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া কগ্নিটিভ থেরাপি, বিহাভিয়ারাল থেরাপি, আর্ট থেরাপি, ফ্যামিলি থেরাপি, স্কিল-বিল্ডিং ট্রেইনিংসহ বিভিন্ন কার্যকর পদ্ধতির মাধ্যমে এই আসক্তি থেকে একজনকে বের আনা সম্ভব।
আরও পড়ুন: ছুটি শেষে কাজের শুরু
আরও পড়ুন: মস্তিষ্কের বয়স কমবে শব্দ ধাঁধা সমাধানে