কিন্তু এই ডায়েটের ফলে যতটুকু ওজন কমে, তার চাইতে অনেক বেশি মাত্রায় শরীর ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। অনেকেই সঠিকভাবে না জেনে ও বুঝে বাড়তি ওজন কমানোর জন্য এই ডায়েটের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। অথচ ক্র্যাশ ডায়েটে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মাঝে পড়তে হয় ডায়েট মেনে চলা ব্যক্তিকে। কী ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এবং কেন, সেটা জেনে নিন আজকের এই ফিচারটি থেকে।
ক্র্যাশ ডায়েট শুরু করার কিছুদিন পরেই দেখা যায় যে ওজন কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এই ওজন কমা খুব একটা কার্যকর নয়। কারণ যে ওজনটি কমছে সেটা আদতে ‘ওয়াটার ওয়েট’, এতে কোন ফ্যাট কমে না। যখন শরীরের চাহিদার তুলনায় ক্যালোরি অতিরিক্ত কম গ্রহণ করা হয় তখন শরীর তার জমাকৃত ফ্যাটের বদলে গ্লাইকোজেন বার্ন করা শুরু করে শক্তির জন্য। প্রতি গ্রাম গ্লাইকোজেনের সাথেই পানি সংযুক্ত থাকে। তাই যখন গ্লাইকোজেন বার্ন হওয়া শুরু হয় তখন শরীরে পানির ঘাটতি থেকে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
শরীর নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় আঁশ, ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের যোগান না পেলেই তার প্রভাব পড়ে রক্তে চিনির মাত্রায়। ফলে ব্লাড সুগারে হেরফের দেখা দেয় এবং এতে করে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক দুর্বলতাজনিত লক্ষণ দেখা দেওয়া শুরু হয়।
আমাদের শরীরে শক্তি আসে ক্যালোরি থেকে এবং ক্যালোরি গ্রহণ হুট করে কমে গেলে তা শরীরের পেশীর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে দেয়। ক্র্যাশ ডায়েটে ওজন কমানোর সময় পেশীর তার শক্তি হারানো শুরু করে এবং এতে করে মাসল লস হয়।
খুব স্বাভাবিকভাবেই শরীর যখন মাসল লস করে, তার সাথে মেটাবলিজমের হারও কমে যেতে শুরু করে। এতে করে স্বাভাবিক সময়ে ও নিয়ন্ত্রিত শরীরচর্চার ক্ষেত্রে যতটা ওজন কমার কথা, তার চাইতে অনেক কম পরিমাণে ওজন কমে। এমনকি ক্র্যাশ ডায়েট থেকে স্বাভাবিক ডায়েটে ফিরে গেলেও মেটাবলিজম স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়।
ক্র্যাশ ডায়েট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং বেশিরভাগ দায়েটের নিয়মানুযায়ী দৈনিক ৭০০ ক্যালোরির কম খাদ্য গ্রহণ করতে বলা হয়। যা ওজন কমালেও শরীরে বড় ধরনের ম্যালনিউট্রিশন বা পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করে। এতে করে শরীর শক্তি হারানোর পাশাপাশি দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে।
কিছু ক্র্যাশ ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, যা সরাসরিভাবে মস্তিষ্ক ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলে দেয়। আমাদের মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকারিতার জন্য কার্ব প্রয়োজন। মস্তিষ্ক যদি তার প্রয়োজন মোতাবেক কার্ব না পায় তবে ঠিকভাবে ফাংশন করতে পারে না। এতে করে কর্টিকসটেরন (Corticosterone) বা স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায় অনেকখানি। এতে করে বিষণ্ণতা, মুড ঘনঘন পরিবর্তনের মতো সমস্যাগুলো দেখা দেওয়া শুরু হয়।
আরও পড়ুন: ওজন কমানো সম্ভব শরীরচর্চা না করেই!