স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন একই রকম কাটবে না।
কোন দিন কাজের চাপ বেশি থাকবে, কোনদিন খুব শান্তিতে পুরোদিন কাটিয়ে দেওয়া যাবে। এর মাঝে কোন না কোন কারণ মানসিক চাপের সৃষ্টি হবে, অস্থিরতা দেখা দিবে। যা একেবারেই স্বাভাবিক। কিন্তু মানসিক চাপের বিষয়টি যদি ঘনঘন দেখা দেওয়া শুরু করে ও ক্রনিক হয়ে ওঠে, তবে এই একটি সমস্যা থেকেই দেখা দিতে পারে বহু ধরনের শারীরিক সমস্যা। কারণ মানসিক চাপ একই সাথে শরীরকেও নানাভাবে চাপের মুখে ফেলে দেয়।
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে ডায়বেটিসের মতো রোগের উৎপত্তি হয়। প্রচণ্ড মানসিক চাপের ফলে লিভার অনেক বেশি চিনি তৈরি করে শরীরকে তার প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদানের জন্য। যার বেশীরভাগই অব্যবহৃত রয়ে যায় এবং রক্তে মিশে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে ক্রনিক মানসিক থেকে ডায়বেটিস দেখা দেয়।
আমরা যখন প্রবল মানসিক চাপে থাকি তখন আমাদের হার্টবিট অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং রক্তনালীকাগুলো সংকুচিত হয়ে যায়। এতে করে খুব স্বাভাবিকভাবেই রক্ত চাপ বেড়ে যায় তুলনামূলক অনেকখানি। যা ঘনঘন দেখা দিলে হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যার সূত্রপাত হয়। এছাড়াও অনিয়মিত এই রক্ত চাপের ফলে রক্তনালীকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মনের সমস্যা খুব সহজেই শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। আমরা যখনই মানসিক চাপে থাকি, আমাদের শরীরের বেশিও শক্ত হয়ে যায়। যাকে বলা হয় টেনসড হয়। মানসিক চাপ দূর হলে তবেই পেশীগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে পারে। এর ফলে মানসিক চাপের পরবর্তী সময়ে মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথার মতো লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে।
মানসিক চাপ হুট করেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অনেক বেশি দৃঢ় করে তোলে, তবে তা একেবারেই অল্প সময়ের জন্য। বারবার মানসিক চাপের মুখে খুব সহজেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয় এবং একটা সময় পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। এতে করে সহজেই ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাসহ অ্যালার্জির সমস্যার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিতে শুরু করে।
আমরা যখন মানসিক দুশ্চিন্তায় এবং চাপের মুখে থাকি তখন খাবার খাওয়ার প্রবণতা অনেকখানি বেড়ে যায়। কারণ মানসিক চাপের সময় শরীরের বাড়তি শক্তির প্রয়োজন হয়, যার ফলে খাবারের জন্য চাহিদা তৈরি হয়। এই বাড়তি ক্যালোরি গ্রহণ থেকেই বাড়তি ওজনের সমস্যার শুরু।
দিনের মাঝে অধিকাংশ সময় মানসিক চাপের মুখে থাকার ফলে ত্বকের নতুন কোষ উৎপাদনের হার স্বাভাবিকের চাইতে অনেক কমে যায়। এতে করে ত্বক অনুজ্জ্বল, অমসৃণ ও ক্লান্ত দেখায় এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই বলীরেখা দেখা দেয় সঠিক সময়ের বহু আগে।
যে সকল নারীরা খুব বেশি মানসিক চাপের মুখে থাকেন, তাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়ার সমস্যা শুরু হয়। সাথে অধিক রক্তপাত, পিরিয়ডকালীন পেট ব্যথা ও মাথা ঘোরানর মতো লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। মানসিক চাপ শরীরের ওপরে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করা শুরু করে বিধায় পিরিয়ডজনিত সমস্যা প্রকাশ পেয়ে থাকে।