মূলত অস্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা থেকেই হার্ট ফেইলুরের মতো বড় সমস্যাটি প্রকাশ পায়। এ কারণে হার্ট ফেইলুর থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখার জন্য সবসময় পরামর্শমূলক আলোচনা করা হয়। কিন্তু যাদের পূর্বে হার্ট ফেইল করেছে, তাদের কোন নিয়মগুলো অবশ্য পালনীয় সেটা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। সুস্থতা পেতে সবার জন্যেই নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন প্রয়োজন, তবে হার্ট ফেইলুর পরবর্তী সময়ে নিয়ম মেনে চলা আরও বেশি জরুরি।
হার্ট ফেইলুর সম্পর্কে যতবেশি জানা যাবে ততবেশি সচেতন ও সাবধান থাকা সম্ভব হবে। হার্ট ফেইল করার পর কীভাবে জীবনযাপন করা প্রয়োজন, হার্ট ফেইলে কতটা ক্ষতি হয় সে সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে অনেকখানি সাবলীলভাবে থাকা সম্ভব হয়। পাশাপাশি চেষ্টা করতে হবে নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রাখা ও তার পরামর্শ মেনে চলার।
অনেক বেশি পরিমাণে লবণ গ্রহণে ওয়াটার রিটেনশন হয়। যা দুর্বল হৃদযন্ত্র ও রক্তনালিকার উপর চাপ প্রয়োগ করে। লবণাক্ত খাবার মানেই অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ। হার্ট ফেইলুরের রোগীদের জন্য যা খুবই শঙ্কাজনক। এ কারণে প্যাকেটজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত বাদাম, খাবারে বাড়তি লবণ গ্রহণের ব্যাপারে বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।
হার্ট ফেইলের রোগীদের নিয়মিত ওজন মনিটর করা বাধ্যতামূলক। যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন ওজন দেখতে হবে। কারণ একটুখানি বাড়তি ওজনও দুর্বল হৃদযন্ত্রের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ওজন মনিটর করার সাথে উচ্চতা অনুযায়ী ওজনে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টাও করতে হবে।
হার্ট ফেইলুরের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো অবসাদ (fatigue). তবে এই অবসাদকে দূর করা সম্ভব শরীরচর্চার মাধ্যমে, যা একইসাথে পেশিকে সুদৃঢ় করার সাথে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে কাজ করবে। শরীরচর্চা হৃদযন্ত্রের সঙ্গে ফুসফুসকেও সবল করে। একজন হার্ট ফেইলুর রোগীর প্রতিদিনের জীবনধারার মাঝে শরীরচর্চা থাকা বাধ্যতামূলক। অবশ্যই ভারি কোন শরীরচর্চা করা যাবে না। সাধারণ হাঁটা, ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলেই উপকার পাওয়া যাবে।
একজন হার্ট ফেইলুর রোগীর খাদ্যাভ্যাসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট (গরুর মাংস, পোলট্রি চিকেন, মাখন, আইসক্রিম, পাম অয়েল) ও ট্র্যান্স ফ্যাট (বেকড খাবার, ফাস্ট ফুড, কফি ক্রিম) সম্পন্ন খাবার থাকবে খুব অল্প পরিমাণে। এই অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটগুলো খুব সহজেই হৃদযন্ত্রে জমা হয়ে আরও বেশি দুর্বল করে দেয়। ফলে হৃদযন্ত্রের রক্ত পাম্প করার জন্য অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। চেষ্টা করতে হবে এ ধরনের ফ্যাটযুক্ত খাবার থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার।
শুধুমাত্র হার্ট ফেইলুরের রোগীর জন্যেই নয়, সুস্থ থাকতে চাইলে প্রত্যেকের উচিত ফল ও সবজি বেশি করে গ্রহণ করা। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের চমৎকার উৎস হলো ফল ও সবজি। সবচেয়ে উপকারী খনিজ পটাশিয়াম, যা হৃদযন্ত্রের সমস্যাকে অনেকখানি প্রশমিত করতে কাজ করে। হৃদযন্ত্র যদি তার প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পটাশিয়াম না পায়, তবে ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কলা, বিভিন্ন বীজ, আলু ও বিট থেকে পাওয়া যাবে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম। তবে কোন খাদ্য উপাদান কতটুকু খাওয়া নিরাপদ সেটা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি খেতে হবে।
ধূমপানের সাথে হার্ট ফেইলুরের কী সম্পর্ক থাকতে পারে- এমন ধারণা থেকে অনেকেই হার্ট ফেইল্যুরের পরেও ধূমপান চালিয়ে যান। যা ডেকে আনতে পারে বড় ধরণের বিপদ। শুধু ফুসফুসের উপরেই নয়, হৃদযন্ত্রের সাবলীলভাবে কাজ করার উপরেও বাধাদান করে ধূমপান। যদি ধূমপানের অভ্যাস থাকে তবে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে এই অভ্যাসটি বাদ দিতে হবে।