কোন কারণ ছাড়াই রাতে ঘুম আসে না। লম্বা রাত না ঘুমিয়ে বা অল্প ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিতে হয়। আলাদাভাবে চিহ্নিত করার মতো কোন সমস্যা বোঝা না গেলেও কোনমতেই রাতে ঘুমানো সম্ভব হয় না। এমন অস্বস্তিকর সমস্যায় কমবেশি ভুগতে হয় অনেককেই। রাতে ঘুম না আসা বা দেরীতে আসার পেছনে বেশ কিছু মেডিক্যাল কারণ থাকে। আজকের ফিচারে এমন ছয়টি কারণকে তুলে আনা হল।
বিব্রতকর এই সমস্যাটি পুরুষদের চাইতে নারীদের মাঝে বেশী দেখা দেয়। ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের সমস্যায় ব্লাডারের উপর স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ কমে আসে। ফলে মূত্রের বেগ দেখা দিলে অপেক্ষা করার মতো সময় হাতে পাওয়া যায় না। এই সমস্যার জন্য রাতের ঘুমের উপরে প্রভাব পড়ে এবং নির্বিঘ্নে ঘুমানো সম্ভব হয় না।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউরোলজি ক্যানসার স্পেশালিষ্ট, ইউরোলজিক সার্জন ও মেডিক্যাল ডিরেক্টর অ্যাডাম রেমিন জানান, যাদের দীর্ঘদিন যাবত ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের সমস্যা রয়েছে প্রাথমিকভাবে রাতে ঘুমানোর সময় অ্যাডাল্ট ডায়পার পরে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। যদিও এটা স্থায়ী কোন সমাধান নয়, তবে সাময়িকভাবে এই কাজটি ঘুমের সমস্যাকে কমিয়ে আনবে।
সাধারণ মাথাব্যথার সমস্যার চাইতে মাইগ্রেনের সমস্যাটি একেবারেই ভিন্ন ও বেশি কষ্টদায়ক হয়ে থাকে। মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথার ফলে ঘুমিয়ে পড়তে যেমন সমস্যা হয়, ঠিক তেমনিভাবে ঘুম ভেঙে যাওয়ার লক্ষণও প্রকাশ পায়। লস অ্যাঞ্জেলেসের নিউরোলজিস্ট ভেরনন ইউলিয়ামস জানান, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব থেকে বেশিরভাগ সময় মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়, এবং এতে করে ঘুম আরও কমে যায়। তিনি পরামর্শ দেন, প্রতিদিন অন্তত আট ঘণ্টা ঘুম, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে জোর দিলে মাইগ্রেনের সমস্যাটি কমে যাবে অনেকখানি।
বেশ কিছু গবেষণার তথ্য জানাচ্ছে, শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি মন ভালো রাখতে, মানসিক চাপ কমাতে, প্রশান্তিদায়ক ঘুম আনতে কাজ করে। সেই সূত্রানুসারে, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব থেকে দেখা দেয় ঘুমজনিত সমস্যা। এমনকি লম্বা সময়ের ম্যাগনেসিয়ামের অভাব থেকে ইনসমনিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ অনেক বড় অবদান রাখে। কারণ খাদ্য উপাদান থেকেই সিংহভাগ ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। খাদ্য তালিকায় ম্যাগনেসিয়ামপূর্ণ খাবার রাখতে চাইলে কলা, কচু শাক, বাদাম, মটরশুঁটি, ব্রকলি, বাঁধাকপি ও সামুদ্রিক মাছ রাখার চেষ্টা করতে হবে।
নাকের খুব কমন একটি সমস্যা হলো পলিপ। এতে করে নাকের ভেতরের মাংস বেড়ে যায় এবং এতে করে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। যাদের পলিপের সমস্যা রয়েছে ঘুমানোর সময় শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ায় ব্যাঘাত ঘটার ফলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া সাইনাসের সমস্যা আছে যাদের, তাদেরও শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হয়।
মাইগ্রেন বা ম্যাগনেসিয়ামের অভাবের পাশাপাশি অন্য যে বিষয়টি ঘুম না আসার পেছনে অনেক বড় অবদান রাখে সেটা হলো ওষুধের প্রতিক্রিয়া বা স্টিমুলেন্ট মেডিকেশন। বেশ কিছু ঘরানার ওষুধ গ্রহণ পরবর্তী সময়ে ওষুধের কার্যকারিতার প্রভাব ঘুম আসতে সমস্যা হয়। এর মাঝে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ও স্টেরয়েড ঘরানার ওষুধ সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।
ক্যালিফোর্নিয়ার থেরাপিস্ট অ্যামেশিয়া আর্থার জানান, ডিপ্রেশন ঘুমের সময়কে পরিবর্তন করে দেয়। যাদের মাঝে দীর্ঘদিন যাবত ডিপ্রেশনের সমস্যা রয়েছে তারা বেশিরভাগ সময় ঘুমাতে পারেন না। এমনকি মানসিক চাপের মুখেও ঘুমের সময়ে পরিবর্তন চলে আসে এবং নেতিবাচক চিন্তা মাথায় ভর করে।