যেকোন একটি ঘটনার উপর ভিত্তি করে একেকজন মানুষ একেকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, একেকভাবে ঘটনাকে বিশ্লেষণ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিদিনের জীবনে ছোট-বড় হরেক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে আবেগ ও অনুভূতি। স্বাভাবিক অবস্থায় একজন কোন একটি ঘটনাকে যেভাবে গ্রহণ করবেন এবং তার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিবেন, রাগের মাথায় তেমনটা কখনোই হবে না।
শুধু রাগ নয়, দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, উচ্ছ্বাস, অভিমান, ভয়- সকল অনুভূতিই আলাদা আলাদাভাবে কোন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপরে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে দেয়, প্রভাব বিস্তার করে বিচার-বিবেচনাবোধের উপরেও। যা ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র সকল কিছুর সাথেই জড়িত। শক্তিশালী এই অনুভূতিগুলো কীভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর প্রভাব তৈরি করে সেটা বিশ্লেষণ করা হলো সাতটি পয়েন্টের মাধ্যমে।
প্রবল অনুভূতি যেমন- রাগ বা ভয় সাময়িক সময়ের জন্য ‘টানেল ভিশন’ তৈরি করে। এই টানেল ভিশনের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সেই সময়ের উপর থেকে মনোযোগ সরে যায় এবং সে সময় প্রাধান্য পায় শুধই নেতিবাচক অনুভূতিটি। ফলে মানুষ বড় পরিসরে চিন্তা করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। এটাকে বলা হচ্ছে টানেল ভিশন।
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষ নিজেকে চিন্তা থেকে দূরে রাখতে ও অস্বস্তিবোধ কমাতে খুব দ্রুত যেকোন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চায়। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেটা হয় অতীত বা ভবিষ্যৎ সময়ের কোন বিষয় না ভেবেই অনেকে শুধুমাত্র বর্তমান সময়ের পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে যেনতেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
স্মৃতিজনিত অনুভূতি মানুষের বিবেচনাবোধ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপরেও অনেকখানি প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- একজন যখন আনন্দিত থাকেন তখন তিনি শুধু বর্তমান সময়ের উপর গুরুত্ব দিয়েই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ তার কাছে একই রকম মনে হয় বলে অতিরিক্ত আনন্দের আতিশায্যে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। একইভাবে কেউ যখন মনঃকষ্ট থাকেন, পুরনো দিনের স্মৃতি ভেবে কষ্ট পান, তখন সেই সময়ের ভিত্তিতে বর্তমান সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যা বেশিরভাগ সময়েই ভুল হয়ে থাকে।
রোগ সংক্রামক বা ছোঁয়াচে হয়ে থাকে, কিন্তু তাই বলে মানুষের আবেগ অনুভূতিও কি সংক্রামক হতে পারে! নিজেদের প্রতিদিনের জীবনের দিকে খেয়াল করলেই বোঝা সম্ভব হবে যে অন্যের আবেগ অনুভূতির খুব সহজেই নিজেদের মাঝে সংক্রমিত হয়। অন্যের আনন্দ কিংবা কষ্ট খুব সহজেই নিজেদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। এমনকি মানসিক চাপে ও দুশ্চিন্তায় থাকা কারোর সাথে কথা বললে তার দুশ্চিন্তার ছায়া দেখা দেয় নিজের মাঝেও। অনেকেই হুট করে দেখা দেওয়া নতুন এই আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা থেকে দেখা দেওয়া আবেগ ও অনুভূতির প্রচণ্ডতার প্রভাবে একেবারেই ভিন্ন কোন বিষয়ে আকস্মিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ঘটনাটি খুব একটা অপরিচিত নয় নিশ্চয়। এটাকেই বলা হচ্ছে ব্যাকগ্রাউন্ড মুড। অন্য কোন কারণে রাগ, কষ্ট, অভিমান থেকে একেবারেই ভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার হয়। যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হঠকারী সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে।
আমরা যখন রেগে থাকি তখন নিজের রাগ কমানোর জন্য অন্যের উপর রাগ ঝাড়ার বা অন্যকে দোষারোপ করে থাকি অকারণে। নিজের ভেতরের ক্ষোভকে অন্যের উপর প্রকাশ করার মাধ্যমে নিজেকে সুপেরিয়র বা নিজেকে সেরা মনে করার প্রবণতা এ সময়ে খুব বেশি দেখা দেয়। যার প্রভাবে ভালো সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়, কাছের মানুষ দূরে চলে যায়।
প্রতিদিন আমরা বহু অনুভূতির মধ্য দিয়ে পার করি। যার বেশীরভাগই স্বাভাবিক ও স্থির। তবে কিছু ঘটনার ফলে লম্বা সময়ের পক্ষপাতদুষ্ট বা বায়াসড অনুভূতির প্রচণ্ডতা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর অনেকেই দীর্ঘ সময়ের জন্য বিষণ্ণতায় ভোগেন। বিষণ্ণতা বেড়ে গেলে আত্মহত্যার মতো চিন্তাও করেন এবং অতিরিক্ত পক্ষপাতদুষ্ট অনুভূতি থেকে এই ভুল কাজের দিকে পা বাড়ান। এখানে শুধুমাত্র একটি অনুভূতিই প্রধান হয়ে ওঠে।