দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে বিপদজনক হারে। ফলে স্বাভাবিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। চার মাস আগে আবিষ্কৃত জীবননাশক এই ভাইরাসটি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন।
ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের ১৪ দিন পর্যন্ত কোন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ করে না এবং এ কারণেই বাড়ছে এর বিস্তার। করোনায় আক্রান্তদের মাঝে ১৪ দিন পর দেখা দিতে শুরু করে জ্বর, কাশিসহ নানা উপসর্গ বা লক্ষণ। কিছু উপসর্গ সম্পর্কে ইতোমধ্যে সবার জানা হয়ে গেলেও আজকের ফিচারে তুলে আনা হল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মাঝে দেখা দেওয়া প্রধান ও মূল ১০টি লক্ষণ। যা সাহায্য করবে নিজেকে ও প্রিয়জনদেরকে সচেতন রাখতে।
শুরুর দিকেই এই সমস্যা দেখা না দিলেও এটাই মূলত করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা। কাশি ছাড়াই এই সমস্যাটি দেখা দেবে। মনে হবে বুকের ভেতরে আটকে আছে এবং ফুসফুসে পর্যাপ্ত বাতাস পৌঁছাচ্ছে না।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষণটি হলো জ্বর আসা। তবে বেশিরভাগ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি না হওয়া পর্যন্ত বোঝা যায় না। প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের প্রফেসর ও ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের ইনফেকশাস ডিজিজ এক্সপার্ট ডঃ উইলিয়াম শ্যাফনার জানান, সকালের দিকে নয়, জ্বর মাপার ক্ষেত্রে বিকাল ও সন্ধ্যার আগে জ্বর মাপা সবচেয়ে সঠিক।
যেনতেন কোন কাশি নয়, এ কাশির ক্ষেত্রে গলার ভেতর খুশখুশে ভাব অনুভূত হবে এবং গলা পরিষ্কারের জন্য কাশি দেখা দেবে। কিন্তু গলার ভেতরে কিছুই থাকবে না এবং শুষ্ক কাশি হবে।
মূলত রাতে ঠান্ডাভাব দেখা দেবে বেশি এবং একইসাথে বাড়বে হাড়ে ব্যথাভাব। সেই সাথে জ্বরও বেড়ে যাবে তুলনামূলকভাবে বেশি। অনেকের ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগার সমস্যা এতো বেশি দেখা দেয় যে কাঁপুনি শুরু হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) জানাচ্ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভয়ানক বিষয়টি হল বিভ্রান্তি তৈরিকারী শারীরিক লক্ষণ। হুট করে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হওয়া, ঠোঁটের রঙ নীলাভ হয়ে আসা, বুকে ব্যথাসহ নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার সমস্যাগুলো দেখা দিয়ে থাকে। এমন হলে সিডিসি পরামর্শ দেন দ্রুত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষা করানোর।
প্রথমদিকে ডায়রিয়ার সমস্যাটিকে করোনাভাইরাসের লক্ষণ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া না হলেও, নানান পরীক্ষা ও গবেষণার ফলে এই ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। যেহেতু এখন এই ভাইরাসটি নিয়ে বহু পরীক্ষা করা হচ্ছে, দেখা গেছে পেটের সমস্যাটিও এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত।
চীন, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বেশ কিছু দেশের গবেষণা থেকে দেখা গেছে ১-৩ শতাংশ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের মাঝে Conjunctivitis এর সমস্যা দেখা দেয়, যা সাধারণ ও প্রচলিত ভাষায় পিংক আই নামে পরিচিত।
হালকা থেকে মাঝারি ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের ক্ষেত্রে স্বাদ ও গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা লোপ পাওয়াকে ধরা হচ্ছে করোনাভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে। গন্ধ ও স্বাদ না পাওয়ার সমস্যাটিকে বলা হয় অ্যানোজমিয়া (Anosmia).
নোভেল করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড মাত্রায় অবসন্নভাবকে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেখেছে, ৬০০০ জনের মাঝে অন্তত ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিশ্চিত করেছে যে, তারা শারীরিক অবসন্নতা বোধ করেছে ভাইরাসে আক্রান্তের ক্ষেত্রে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে ৬০০০ রোগীর মাঝে অন্তত ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মাঝে মাথা ও গলাব্যথার সমস্যা এবং ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে নাক বন্ধের সমস্যা দেখা গেছে। তবে এই লক্ষণ খুব একটা কমন নয় এবং সাধারণ ফ্লুজনিত সমস্যাতেও দেখা দিতে পারে।