“এসো হে বৈশাখ, এসো এসো
তাপস নিঃশ্বাস বায়ে
মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক যাক যাক
এসো এসো...”
প্রতি বছরে বাংলা বছরের প্রথম দিন, বৈশাখের প্রথম প্রহরে সম্মিলিত স্বরে সুরে সুরে এই গানের সাথে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা নতুন বছরকে। সাজ সাজ রবের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হয় পুরনো বছরকে, ফেলে আসা বছরের জঞ্জালকে।
কিন্তু এ বছরে সবকিছুই এলোমেলো করে দিয়েছে ভয়াল ও মহামারী করোনাভাইরাস। প্রতি বছর ভোর হতেই যে রমনার বটমূল উৎসবে, গানে, আনন্দে মাতোয়ারা থাকত সেখানে এ বছরে বিরাজ করবে নিস্তব্ধতা। টিএসসি, রবীন্দ্র সরোবর, ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসগুলোও হয়ে থাকবে জনমানুষহীন। আগামী বছরে দারুণ একটি বৈশাখ পালনের প্রত্যয়ে কষ্ট হলেও মেনে নিতে হবে এ বছরের উৎসববিহীন বৈশাখকে। পরিস্থিতিটাই যে এমন!
তবে বাড়ির বাইরে বৈশাখের উৎসব না থাকলেও, বাড়িতে পরিবারের মানুষদের নিয়েই দিনটি আনন্দে কাটানোর পরিকল্পনায় কোন সমস্যা নেই। তাই সেভাবেই না হয় পরিকল্পনা করে ফেলুন এ বছরের বাংলা নববর্ষের জন্য।
প্রতি বছরের মত এ বছরে বৈশাখের জন্য নতুন পোশাক কেনা হয়নি তো কি হয়েছে। বিগত বছরের বৈশাখের কোন একটি শাড়ি, পাঞ্জাবি বের করে হাতের কাছে রাখুন পরার জন্য। সাদা-লাল কিংবা শুধু লাল রঙয়ের যেকোন পোশাকেই বৈশাখের আমেজটা দারুণ ফুটে ওঠে। পোশাকের সাথে মানানসই ও হালকা সাজও রাখুন সঙ্গে।
ঘরদোর গুছিয়ে ফেলুন উৎসবের আমেজকে মাথায় রেখে। মাটির শোপিসগুলো ঝেড়েমুছে নিন, ফুলদানির কৃত্রিম ফুলগুলো ধুয়ে শুকাতে দিন, মানিপ্ল্যান্টের পাতাগুলো পরিষ্কার করুন, বিছানার চাদরটাও পাল্টে নিন এক ফাঁকে।
প্রতি বৈশাখে বিশেষ যে মাটির বাসনগুলো বের করা হয় সেগুলো বের করে ধুয়ে নিন। পান্তা ভাতের জন্য আগামীকালের রাতের ভাতে বাড়তি চাল দিন মনে করে। এ সময়ে খাবারের আয়োজন খুব জমকালো করার প্রয়োজন নেই। হাতের কাছে যা আছে তা দিয়েই তৈরি করে নিন কয়েক পদের ভর্তা। সাথে শুকনো মরিচ পোড়া।
সকালে ভরপেট নাশতা শেষে চায়ের কাপ হাতে পরিবারের সকলে মিলে বসুন আড্ডা দিতে। হয়তো কারোর অফিসের কাজ পড়ে আছে, ঘরের কাজ আছে হাতে। আধা ঘন্টার জন্য সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে নিজেদের মতো করে গল্প করুন একসাথে।
সেই সাথে কারোর মোবাইলে ছেড়ে দিন বৈশাখের গান, বাংলা গান। দেখবেন বাড়ির ভেতরেই বৈশাখের আমেজ চলে এসেছে। কোথাও বেড়াতে যেতে পারছেন না, কিংবা মেহমান আসছে না বলে মন খারাপের কিছু নেই। ইন্টারনেট এই কঠিন সময়েও সবাইকে কাছে রেখেছে।
ভিডিও কলে কথা বলুন সে বন্ধুর সাথে, যার সাথে প্রতি বছরের বৈশাখের পরিকল্পনা করা হয়। যে আত্মীয়ের বাসায় প্রতি বৈশাখের বিকেলে সপরিবারে ঘুরতে যাওয়া হয় তাকেও মনে করে কল দিন, কথা বলুন। এ সময়ে সকলে সুস্থ আছে, সাবধানে আছে- এটাই তো সবচেয়ে বড় পাওয়া।
এ বছরের বৈশাখটা খুব ব্যতিক্রম, কিছুটা বেদনারও বটে। কিন্তু প্রতি বছরের মত বৈশাখ মাসটি আসবে পুরো একটি নতুন বছরকে সঙ্গী করে। অন্যান্য বছরের মত বড় পরিসরে আয়োজন করা না হলেও, ঘরোয়াভাবে নিজ বাড়িতে কাছের মানুষদের নিয়ে একদিনের আনন্দ যাপন সাম্প্রতিক সময়ের দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপকে অনেকটাই ফিকে করে দিবে।
এবারের বৈশাখে প্রাণে আশা বেধে গলায় সুর মেলানো হোক রবী ঠাকুরের কথায়- ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’।