দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে বেড়েছে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটিও।
রোববার (৩ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬৩ জন। বর্তমান পরিস্থিতিতে যা খুবই ভালো একটি খবর।
তবে এই ভালো খবরটির সাথে একটি সাধারণ আশঙ্কাও থেকে যায়। করোনাভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে যারা সুস্থ হয়েছেন, তাদের করোনাভাইরাসে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ও ঝুঁকি কতখানি?
সাধারণ জনগণের জন্য করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভ্যাকসিন সহজলভ্য হতে এখনও বহুদিন বাকি। সেক্ষেত্রে করোনার বিপক্ষে রোগ প্রতিরোধ গড়ে ওঠার আশা করছেন বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা। এটাকে বলা হয় হার্ড ইমিউনিটি (Herd Immunity). যার ধারণাটি হল, কোন একটি ভাইরাসে বহু মানুষ আক্রান্ত ও তা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলে, মানুষের মাঝে সেই ভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ার একটি প্রতিরোধ গড়ে ওঠে প্রাকৃতিকভাবে। এর ফলে পরোক্ষভাবে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা কমে যায়।
কিন্তু অন্যান্য সকল ভাইরাসের চেয়ে কোভিড-১৯ বেশ জটিল একটি ভাইরাস। এছাড়া ভাইরাসটি আবিষ্কৃত হয়েছেও খুব কম দিন। ফলে এখনও এর সম্পর্কে বিস্তারিত ও পরিষ্কারভাবে কোন তথ্য জানাতে পারছেন না গবেষকেরা। তবে করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর এতে পুনরায় আক্রান্তের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO). জটিল এই বিষয়টি সম্পর্কে এখনই কোন মতামত দিতে পারছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC).
স্যান্টা মনিকা প্রাইমারি কেয়ারের বোর্ড সার্টিফায়েড ইর্টার্নিস্ট এবং প্রাইমারি কেয়ার ডাক্তার ফিলিপ ব্রেটস্কি জানান, চীনে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮১,০০০, যেখান থেকে পরবর্তিতে মাত্র ১০০ জন রোগীর করোনায় পুনঃআক্রান্তের বিষয়ে জানা যায়। যা চীনের পুরো করোনা পরিস্থিতির মাঝে ০.১ শতাংশ। একইভাবে দক্ষিণ কোরিয়াতেও করোনায় পুনঃআক্রান্ত হয় দেশটির সম্পূর্ণ করোনা পরিস্থিতির ০.৯ শতাংশ। সংখ্যার দিকে খেয়াল করলে করোনায় পুনঃআক্রান্তের বিষয়ে বলা যায়, করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর এতে পুনরায় আক্রান্তের সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই নেই।
ডঃ ব্রেটস্কি বলেন, ‘যদিও করোনায় পুনঃআক্রান্তের সম্ভাবনা থেকেই যায়, কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলাই যায় এটা আসলে ব্যাতিক্রম ঘটনা।’
এদিকে করোনায় পুনঃআক্রান্তের বিষয়ে জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির এপিডেমিলজিস্ট এলিমি গার্লি, এমপিএইচ, পিএইচডি বলেন, করোনায় পুনঃআক্রান্তের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসলেও সায়েন্টিফিক গবেষণায় তা আসেনি। কিছু রোগী পুনঃআক্রন্তের বিষয়টি জানালেও এমনটা ঘটা বেশ অস্বাভাবিক। হয়তো মেডিকেল রিপোর্টে কোন গড়মিল হয়েছে ল্যাব টেস্ট করার সময় অথবা করোনা পরবর্তী অসুস্থতাকে নিজ থেকেই পুনঃআক্রান্ত ধরে নিয়েছে রোগী। ফলে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে করোনা থেকে সুস্থ ওঠার পড়ে আবার এতে আক্রান্ত হয়েছেন তারা।
এক্ষেত্রে তিনি পরামর্শ দেন দুশ্চিন্তা না করে সচেতন ও সতর্ক থাকার জন্য। করোনায় আক্রান্ত ও পুনঃআক্রান্ত হওয়ার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে থাকায়, নিয়ম মেনে চলা হবে এ সময়ের সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত।