ঈদের ছুটি ফুরিয়ে গেলেও রয়ে গেছে ঈদের আমেজ। চলমান ব্যস্ত জীবনে ঢুকে যেতে হচ্ছে সবাইকেই। দীর্ঘ ছুটি ও আলস্য শেষে কাজে ফেরার সময় হুট করেই দাঁতের সমস্যা দেখা দিলে দারুন বিপাকে পড়তে হয়। আর দাঁতের সমস্যাটি যদি হয় সেনসেটিভ দাঁতের ব্যথা, তবে ভুগতে হয় অনেক বেশি।
সেনসেটিভ কিংবা সংবেদনশীল দাঁতের সমস্যাটি দেখা দিতে পারে বেশ কিছু কারণে। তার মাঝে অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো-
১. দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া।
২. অ্যাসিডিক ও বেভারেজ জাতীয় পানীয় অতিরিক্ত পানের ফলে দাঁতে ক্ষয় হওয়া।
৩. দাঁতের ক্ষয়রোগ দেখা দেওয়া।
৪. দাঁতের পূর্বের ফিলিং খুলে আসা।
৫. ভাঙ্গা দাঁত।
৬. দাঁতের গামের সমস্যা দেখা দেওয়া এবং
৭. রাতের ঘুমের ভেতর দাঁত কিড়মিড় করা।
সেনসিটিভ দাঁতের সমস্যায় ঠাণ্ডা, গরম কিংবা যেকোন ধরণের অ্যাসিডিক পানীয়তে তীব্র শিরশিরে ভাব দেখা দেয়। এই শিরশিরে অনুভূতির মাত্রা তীব্র হবার ফলে প্রবল ব্যথাভাব তৈরি করে। এমনকি ঠাণ্ডা বাতাসেও দাঁতে এই শিরশিরে অনুভূতি দেখা দেয়। সাথে দাঁতের মাড়ির অংশ লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যাও তৈরি হয়।
সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন দাঁতের সেনসিটিভিটি দূর করতে পারে। তবে কষ্টদায়ক সমস্যার সমাধান পেতে ঘরোয়া উপাদান ব্যবহারেও দারুন ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়। জেনে নিন এমন চমৎকার কিছু উপাদান ও তার ব্যবহার।
নারিকেল তেল
প্রতিদিন সকালে একবারে এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল মুখে নিয়ে দশ মিনিট সময়ের জন্য কুলকুচি করতে হবে। এরপর হারবাল পেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে ফেলতে হবে। নারিকেল তেলের অ্যানালজেসিক ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান সেনসেটিভ দাঁতের ব্যথা কমায়।
পেয়ারা পাতা
দাঁতের ব্যথা কমাতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের দিকে দাঁতের ব্যথার জন্য পেয়ারা পাতা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। পেয়ারা পাতা ব্যবহার করার জন্য আলাদা কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। কয়েকটি পাতা পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য চাবাতে হবে। এরপর নরমাল পানিতে কুলকুচি করে নিতে হবে। প্রতিদিন দুইবার এইভাবে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
পেয়ারা পাতা কেন কাজ করে জানেন? পেয়ারা পাতাতে আছে ফ্ল্যাভনয়েড, যা বিশেষ এক ধরণের প্রদাহ বিরোধী উপাদান। এই উপাদান খুব দ্রুত দাঁতের ব্যথা কমাতে কাজ করে।
রসুন
ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হবে এক কোয়া রসুন, কয়েক ফোঁটা পানি ও এক চিমটি লবণ। প্রথমে রসুন পিষে, এর সাথে পানি ও লবণ মিশিয়ে আক্রান্ত দাঁতে এপ্লাই করতে হবে। ১০-১৫ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করে নরমাল পানিতে কুলি করে নিতে হবে। প্রতিদিন একবার রসুন ব্যবহার করলেই হবে।
রসুনে আছে প্রদাহ বিরোধী ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান সমূহ। যা সেনসেটিভিটির জন্য দেখা দেওয়া দাঁতে ব্যথা কমায়।
টি ট্রি অয়েল
ছয় ফোঁটা টি ট্রি অয়েল ও এক চা চামচ নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে আক্রান্ত দাত মাড়ির অংশে প্রয়োগ করতে হবে। ৫-১০ মিনিট পর কুলি করতে হবে। প্রতিদিন তেলের এই মিশ্রণটি দুইবার ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তেলের এই মিশ্রণটি গিলে ফেলা যাবে না।
অন্যান্য সকল এসেনশিয়াল অয়েলের ভেতর টি ট্রি অয়েল সবচেয়ে পরিচিত। যেকোন ব্যথা নিরাময়ে টি ট্রি অয়েলের প্রশান্তিদায়ক উপাদান কার্যকরী। এছাড়া অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও প্রদাহ বিরোধী উপাদান থাকার ফলে মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
এই সকলই ঘরোয়া উপায়ে প্রতিকার ও ব্যথা কমানোর উপায়। তবে দাঁতের সেনসেটিভিটি যেন দেখা না দেয়, তার জন্য মানতে হবে কিছু নিয়ম।
১. সফট টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হবে।
২. দাঁত ব্রাশ করতে হবে সযত্নে।
৩. দাঁত কিড়মিড় করার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। ঘুমের ভেতর দাঁত কিড়মিড় করার অভ্যাস থাকলে, তা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৪. অ্যাসিডিক ঘরানার পানীয় ও খাবার পরিহার করতে হবে।
৫. নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে দাঁতের চেকআপের জন্য যেতে হবে।
এছাড়া যে সকল খাবারে দাঁতে সমস্যা দেখা দেয়, সেই খাবারগুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে শুধু দাঁতের ব্যথাই কমবে না, দাঁতের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।