ক্যাসিনো!- উন্নত বিশ্বে বা পর্যটনের জন্য বিখ্যাত শহরগুলোতে ক্যাসিনো খুবই পরিচিত একটা অনুষঙ্গ। এসব দেশে গিয়ে ক্যাসিনো খেলায় মজে থাকেন এমন বাংলাদেশিও আছেন বেশ।
কিন্তু তাই বলে একেবারে ঢাকায় ক্যাসিনো! তাও আবার কিছুদিন আগে থেকে নয়। বেশ লম্বা সময় ধরে চলছে ঢাকায় ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসা। আর এই ব্যবসার সঙ্গে রাজনৈতিক মহলের ক্ষমতার সম্পর্ক থাকায় প্রশাসনের নাকের ডগায় বেশ চলছিল অবৈধ এই আয়োজন। ক্যাসিনোর জাল বিস্তারের জন্য এই মহলটি বেছে নেয় দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে। মতিঝিল পাড়ার বেশ কয়েকটি স্পোর্টিং ক্লাবে পেছনের কয়েক বছর ধরে চলছিল ক্যাসিনোর মচ্ছব।
প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতবদলের এই জুয়ার ভাগাভাগির বিস্তার এতদূর গভীর পর্যন্ত পৌঁছেছিল যে এর সঙ্গে জড়িতদের নাম যখন প্রকাশ্যে আসে তখন অবিশ্বাস ভরা চোখ নিয়ে অনেকের প্রশ্ন- বলেন কি, উনিও?
রাজধানীর পাঁচটি স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযান চালিয়ে র্যাব ক্যাসিনোর সন্ধান পায়। একেবারে যেনতেন ভাবে নয়। পুরোদস্তুর পেশাদারি আদলে এসব ক্লাবে দিনে-রাতে ক্যাসিনো বসানো হয়েছিল। ক্যাসিনোর এসব সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছিল। ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে দক্ষ ক্যাসিনো কর্মীও আনা হয়েছিল। রমরমা এই ক্যাসিনোর সঙ্গে চলতো মাদকের কেনাবেচাও। সন্ধ্যা হলে মতিঝিলের ক্লাব পাড়ার আলো-আঁধারির এসব ক্যাসিনো যেন রহস্যঘেরা পুরী! যার চারধারেই শুধু টাকা আর টাকার ছড়াছড়ি!
ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া চক্র, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, ইয়াংমেন্স ফকিরেরপুল ক্লাব এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব-মতিঝিলের এই ছয়টি ক্লাব ও ক্লাব সীমানায় ক্যাসিনো পরিচালনার সন্ধান পায় র্যাব। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান ক্লাব তো ক্লাব সীমানায় ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য আলাদা একটা ভবন তৈরি করে সেটা ভাড়া খাটায়। এসব ক্যাসিনোতে র্যাবের অভিযানে বিভিন্ন ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা আটক হন। জনাকয়েক বিদেশেও পালিয়ে আছেন। ক্লাবে তালা ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ।
খেলাধুলার আড়ালে ক্লাব কর্তাদের এই অবৈধ ব্যবসা পুরো ক্রীড়াঙ্গনকে লজ্জাকর অবস্থায় ফেলে দেয়। খেলাধুলার মূল শিক্ষাই হলো নৈতিকতা, সহনশীলতা, একে অন্যের প্রতি সম্মানবোধ এবং আদর্শিক জীবনবিধান। অথচ লোভী, আদর্শ বিচ্যুত এবং কুপমন্ডুক কিছু ক্রীড়া সংগঠকের কারণে প্রায় শতবর্ষী পুরানো ঐতিহ্যবাহী এসব ক্লাবের মান মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির সত্য উদঘাটনের মাধ্যমে এসব দু’নম্বরি ক্রীড়া সংগঠকদের চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে।
ক্লাবের আর্থিক সহায়তা ও পরিচালনার জন্য ক্যাসিনোর দ্বারস্থ হওয়ার যে যুক্তি তুলছেন সংশ্লিষ্টরা তা পুরোপুরিই অসত্য এবং অযৌক্তিক। ক্যাসিনো কখনো স্পোর্টিং ক্লাবের আর্থিক সমস্যার সমাধান করে না। বরং শুধু গুটিকয়েক ব্যক্তির ব্যাংক ব্যালান্স বাড়ায়!
ক্লাব পাড়ায় ক্যাসিনো বসিয়ে উপকৃত হয়েছেন কিছু সংখ্যক চিহ্নিত কর্তা। আর কোতল হয়েছে গোটা ক্লাব। একেই বলে উপকারির মাংস কেটে নিজের উদরপূর্তি করা। যে ক্লাবের পরিচয়ে এসব ক্লাব কর্তারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে নিজেদের মান্যগণ্য বলে বুক ফুলিয়ে ভিড় ঠেলে সামনে এসে দাঁড়াতেন, সেই তারাই ক্লাবের ঐতিহ্য, পরিকাঠামো ও অস্থিমজ্জা কেটে টুকরো টুকরো করে গোপন বাজারে বিক্রি করে দিলেন!
২০১৯ সাল ক্রীড়াঙ্গনে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির বছর এবং একই সঙ্গে এই কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকা ক্রীড়া সংগঠকদের চিনে নেওয়ার সময়ও বটে!