বরিশাল: কাঁসার তৈজসপত্রের সঙ্গে রাজা-বাদশার আমল থেকেই মিশে আছে আভিজাত্য আর ঐতিহ্যের ছোঁয়া।
তবে বর্তমান প্লাস্টিক, মেলামাইন আর সিরামিকের যুগে কাঁসার ব্যবহার কিছুটা কমেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম হলেও সত্যি বরিশাল নগরের গীর্জামহল্লা এলাকায় (কে.বি হেমায়েত উদ্দীন রোড) ঐতিহ্যবাহী ‘দধি ঘরে’ এর কদর পুরো শতভাগ।
প্রায় ৬৫ বছর ধরে তিন পুরুষের ঐতিহ্যের ধারা অক্ষুন্ন রেখে এখনো কাঁসার বাটিতে পরিবেশন করছেন দধির সঙ্গে মিষ্টি, মুড়ি, চিড়া, ঘোল। এর সঙ্গে আরও আছে মাখন, ছানা। এছাড়াও ঘি ও টক দধিও পাওয়া যায় এখানে।
স্বাদ আর ঐতিহ্যের ছোঁয়ায় শুধু নগরবাসীর কাছে নয় বরং পুরো জেলায় এই দধি ঘরের কদর রয়েছে। ছোট্ট ছিমছাম এই দোকানটিতে সারাদিনই লেগে থাকে সাধারণ মানুষের উপচে পড়া ভিড়। অনেকটা লাইন ধরেই খেতে হয় বিখ্যাত এই দধি ঘরে।
এছাড়াও এই দধিঘরে রয়েছে পুরনো আমলের ঘড়ি ও রেডিও। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, জিনিস দুটি এখনো চলছে সেই আগের মতোই।
নিজেদের কারিগর দিয়ে তৈরি এই দধি একবার খেলে, আরেকবার খেতে ইচ্ছে করবেই। গুণগত মান আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে নেই কোনো আপোষ। দোকানটি ছোট্ট হলেও সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করেন এখানকার কর্মচারীরা।
বড় চুল্লিতে গরুর দুধে পাক দিতে দিতে প্রধান কারিগর মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদার (৬০) বার্তা২৪.কমকে জানান, দীর্ঘ প্রায় ৩৮ বছর ধরে এই দধি ঘরে কাজ করছেন। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ৪ থেকে ৬ মণ দুধ দিয়ে এই দধি তৈরি করা হয়। এছাড়াও মাখন, ছানা, টক দধি, ঘি এবং ঘোলও তৈরি করা হয় এই দুধ থেকেই।
প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন কর্মচারী দধি তৈরির কাজ করে থাকে। এছাড়াও তিন লিটার দুধে এক লিটার দধি তৈরি করা যায়। এই দুধে পাক দিয়ে দধি বানাতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা।
বিক্রয়ের বিষয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মিষ্টি দধি প্রতি কেজি ১৯০ টাকা, ঘৃত প্রতি কেজি ১ হাজার ১০০ টাকা, মাখন প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, ছানা প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, মিষ্টি মুড়ি প্রতি কেজি ১৫০ টাকা, টক দধি প্রতি কেজি ১০০ টাকা দামে বিক্রয় করা হয়। এছাড়াও এক বাটি দধি, চিড়া, ঘোল, মুড়ি, ছানা, মাখন মিশিয়ে ৬০ টাকা এবং শুধু দই, চিড়া, ঘোল ও মুড়ি ৪০ টাকা দামে বিক্রয় করা হয়।
দধিঘরের বর্তমান মালিক মিজানুর রহমান মনির বলেন,‘পূর্বে বরিশালে দধিঘর বলতে শুধু আমাদের দোকানকেই চিনত মানুষ। দাদা-বাবাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতেই আজো এই দধিঘরের দধির মান একই রকম। কিন্তু বর্তমানে দোকানের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতা ভাগ হয়ে গেছে। তবে আমাদের পুরনো ক্রেতারা আজো এই দোকানে আসেন।’
তিনি আরও জানান, ‘গরমের সময় এই দধিঘরে তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা থাকে না। সেই সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে এই বেচাকেনা। মাঝে মাঝে বেচাবিক্রি বেশি আর জায়গা না থাকায় অনেককে বসতেও দিতে পারি না। ফলে ক্রেতাদের ফিরিয়েও দিতে হয়।’