রংপুর: দুপুর ১২টা। তিন চাকার ব্যাটারি চালিত একটি যাত্রীবাহী অটো হাজিরহাট এলাকার দিকে যাচ্ছিল। এই অটোকে সাইড দিতে গিয়ে হঠাৎ বিকট শব্দ। ঘটল বেপরোয়া দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ। সেকেন্ডের মধ্যেই দুমড়েমুচড়ে যায় বাস দুটি। ঘটনাস্থলেই অকালে ঝড়ে যায় তরতাজা চারটি প্রাণ। আর হাসপাতালের বেডে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরা হয়নি আরও চারজনের।
মহাসড়কে চলাচলে নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত তিন চাকার অটোকে সাইড দিতে গিয়েই এমন দুর্ঘটনা দেখলেন নিরাপদে গন্তব্যে ফেরার আসায় বাসে থাকা যাত্রীরা। রোববার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুরের দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের সিও বাজার এলাকার বিজিবি সদর দপ্তর গেটের কাছে এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।
দুই বাসের মুখোমুখি ওই সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনসহ শিশু-নারী মিলে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের মধ্যে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখন ২১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪টি ওয়ার্ডে সরেজমিনে দেখা যায় আহতদের আহাজারি। কান্না থামছে না স্বজনদের। সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তালুক বর্মণ গ্রামের রুবেল হোসেন। এ দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন স্ত্রী রোকসানাকে।
শোকে কাতর রুবেল হোসেনের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের। বাকরুদ্ধ রুবেল জানান, তিন চাকার অটোকে সাইড দিতে গিয়েই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চালক বেপরোয়া গতিতে ছিলেন। এ কারণে বাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি তিনি।
ওই দুর্ঘটনায় আহত দিনাজপুরের সৈয়দপুর এলাকার নাজমুল ইসলাম বলেন, বাস চালক আকাশে উড়ছিলেন। যাত্রীদের অনেকেই তাকে ধীর গতিতে বাস চালানোর জন্য বলেছিল। কিন্তু চালক কথা শোনেনি। বরং তারাগঞ্জ এলাকা পার হয়ে বাসের গতি আরও বাড়িয়ে দেন। বিপরীত দিক থেকে আসা বাসটির গতিও বেপরোয়া ছিল। এ কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বাস ও চালকদের আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।
অপরদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিকে আগামী শনিবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রোববার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বগুড়া থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী একটি যাত্রীবাহী বিআরটিসি বাস রংপুরের সিও বাজার এলাকায় পৌঁছালে বিপরীতমুখী দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা রংপুরগামী অপর একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৪ জন মারা যায়।