বেনাপোলে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ভারত থেকে ২০ লাখ মে. টন পণ্য আমদানি

, জাতীয়

আজিজুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর) | 2023-08-26 02:40:51

বেনাপোল(যশোর): দেশের সবচেয়ে বড় ও বেশি রাজস্ব দাতা বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মে. টন পণ্য আমদানি হয়েছে। একই সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৯৫০ মে. টন পণ্য। আমদানি করা পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ হাজার ৬৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ৮১হাজার ১২৩ মে. টন এবং ভারতে রফতানি হয়েছিল ৪ লাখ ১ হাজার ১৭৭ মে. টন পণ্য। ওই সময় আমদানি পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয় ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ কমেছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৯ মে. টন। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ১ হাজার ৪০৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা।

দেশে সরকার অনুমোদিত ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে চলমান রয়েছে ১২টি। এসব বন্দর থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে। বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের প্রধান বাণিজ্যিক শহর কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। ভারতের কলকাতা শহর থেকে একটি ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে মাত্র ৫ ঘণ্টায় কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পৌঁছাতে পারে বেনাপোল বন্দরে। তেমনি একই সময় বেনাপোল বন্দর থেকে রফতানি পণ্য নিয়ে ট্রাক পৌঁছায় কলকাতা শহরে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে এ পথে প্রথম থেকে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের আমদানি, রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। এ বন্দরে বাণিজ্যের সাথে কাস্টমস, বন্দর, সিঅ্যান্ডএফ ও ট্রান্সপোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। আমদানি পণ্যের মধ্যে শিল্ক কারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, গার্মেন্টস সামগ্রী, কেমিক্যাল ও খাদ্য দ্রব্য উল্লেখযোগ্য। রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাট, পাটজাত দ্রব্য, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, জুট, গার্মেন্টস ও মাছ উল্লেখযোগ্য।

বেনাপোল বন্দরের আমদানি রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, চাহিদা থাকলেও বন্দরের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ছেড়ে অন্য দিয়ে আমদানি করছেন। বিশেষ করে বন্দরে আমদানি পণ্যের মান পরীক্ষণের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় সময় ক্ষেপণে দ্রুত পণ্য খালাস করতে না পেরে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এতে আটকে থাকা পণ্যে ব্যবসায়ীরা যেমন লোকসানে পড়ছেন তেমনি পণ্যের গুণগত মানও নষ্ট হচ্ছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনে সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বাণিজ্যের সিংহভাগই সম্পন্ন হয় দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে। বছরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় বন্দরে আমদানি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের ভাল ব্যবস্থা নাই। খোলা আকাশের নিচে রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে আমদানি পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। এখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব হবে।

সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী জানান, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এ বন্দরে আমদানি বেড়েছে। বৈধ পথে ভারত থেকে আসছে ভায়াগ্রার মত মাদকদ্রব্যের চালান। গত বছরে ৩ হাজার মে. টন ওজনের ভায়াগ্রার দুটি চালান বেনাপোল বন্দরে আটক হলেও এখন পর্যন্ত পাচারকারীরা রয়েছে ধরা ছোঁওয়ার বাইরে। এসব কারণে গেল ৪ বছর আমদানি পণ্য থেকে সরকারের কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।

বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা বলেন, শুল্ক ভবনে স্বল্প পরিসরে 'বিএসটিআইয়ের একটি শাখা চালু হয়েছে। তবে বিসিএসআইআরসহ অন্য প্রতিষ্ঠানের শাখাও যাতে দ্রুত স্থাপন করা হয় তা লিখিতভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এছাড়া রাজস্ব আয়ে গতি ফেরাতে কাস্টমস কর্মকর্তারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে রেলে বাণিজ্য চালু হওয়ায় বাণিজ্যে অনেক গতি ফিরেছে। দিনের দিন পণ্য খালাস হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর