৬ ঘণ্টা পরিশ্রমে মেলে ৬০ টাকা

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’
  • শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

স্বামীর একা রোজগার দিয়ে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয় তাই এখানে এসে কাজ করছি। আমরা এখানে সকাল ৬টায় আসি আর বাসায় যাই দুপুর ১২ টায়। এর বিনিময়ে আমাদেরকে দেওয়া হয় মাত্র ৬০ টাকা। এতো কম টাকায় সংসার চালানো কঠিন। এসব নিয়ে কেউ কথা বললেই তাকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়েই পেটের টানে এসব করতে হচ্ছে’- আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন নওগাঁর নিয়ামতপুরে চুল বাছাইয়ের কাজ করা নারী শ্রমিক মীনারা বেগম।

শুধু মীনারা বেগমই নয়, তার মতো এমন শত শত নারী বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মজুরি থেকে। আর স্বল্প বেতনে কাজ করিয়ে নিয়ে লাভবান হচ্ছেন কারখানার মালিকরা।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে নারীদের চুল বাছাই আর পরিষ্কারের কাজ করতে দেখা  যায়। এসব শ্রমিকদের মধ্যে অধিকাংশই গৃহবধূ ও কিশোরী। মেয়েদের মাথার ঝরে পড়া চুল বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করে প্রথমে চলে প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ। তারপর চুলে থাকা নানা রকম ময়লা একটি সুঁচের মাধ্যমে সরিয়ে সেগুলোকে রাখা হয় আলাদা জায়গায়। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে চুল বাছাইয়ের কাজ।

৬ ঘণ্টা পরিশ্রমে মেলে ৬০ টাকা

কাজ করা নারী শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টানা ৬ ঘণ্টা কাজ করার বিনিময়ে দেওয়া হয় মাত্র ৬০ টাকা। আবার কেউ যদি সময়ের আগে বাসায় চলে যায় তাহলে সেদিনের বেতন থেকে টাকা কাটা হয়।

বিজ্ঞাপন

শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের গৃহবধূ নূরেকা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা ভোর ৬টায় এখানে আসি আর যাই দুপুর ১২টায়। প্রতি ঘণ্টায় ১০ টাকা করে ৬ ঘণ্টায় ৬০ টাকা দেওয়া হয়। এই বেতনে আমাদের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যায়। এ নিয়ে যদি সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হয় তাহলে আমরা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানেজার হোসাইন বার্তা২৪.কমকে বলেন, নওগাঁর বিভিন্ন স্থান থেকে হকাররা চুলগুলো সংগ্রহ করে আমাদের কাছে বিক্রি করে। প্রতিকেজি চুলের মূল্য ১২ হাজার টাকা আবার প্রকারভেদে ৯ হাজার টাকাও হয়। কেনার পরে প্রতিটি গ্রামে চুল ভাগ করে দেয়া হয়। ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায় নিদিষ্ট পরিমানে চুল তাদেরকে বাছাইয়ের জন্য দেওয়া হয়। এতে তারা মজুরি পায় ৬০ টাকা।

তিনি আরো বলেন, আশেপাশের সবাই এই টাকাই নারী শ্রমিকদের বেতন দেয়। যদি সবাই বাড়িয়ে তাইলে আমরাও বাড়িয়ে দিব।

নিয়ামতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমতিয়াজ মোরশেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি অবশ্যই পাওয়া উচিত। আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি কী করা যায়।