ঠাকুরগাঁও: দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে পরে ছিল ঠাকুরগাঁওয়ে নির্মিত সূর্য সন্তানদের ম্যুরালটি। গত বছরের শেষের দিকে সেখানে লাইট লাগিয়ে এটিকে আলোর মুখ দেখিয়েছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক জেলা প্রশাসক। এরপর কিছুদিন আলোর মধ্যে থাকলেও শেষ পর্যন্ত আবারো অন্ধকারের মধ্যে চলে গেলেন সাত বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতি বিজড়িত সেই ম্যুরালটি।
ঠাকুরগাঁও শহরের অডিটরিয়াম হলরুমের সামনে অবস্থিত সেই সাত বীরশ্রেষ্ঠের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত ‘সূর্য সন্তান’ ম্যুরালটি।
যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই সোনার বাংলাদেশ, আজ তাদেরকেই করা হচ্ছে অবহেলা। প্রশাসন কিছুদিন আগে লাইট লাগিয়ে এটাকে আলোকিত করেছিল। এখন আবারো অন্ধকারের মধ্যে কেন? এমনি নানা রকমের প্রশ্ন উঠছে সাধারণ মানুষের মনে।
জানা যায়, জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে প্রায় ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম হলরুমের সামনে সাত বীরশ্রেষ্ঠকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘সূর্য সন্তান’ নামে একটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী ও বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন সূর্য সন্তানদের ম্যুরালটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের কিছুদিন পর থেকেই হঠাৎ করেই অবহেলিত অবস্থায় পরে থাকে ম্যুরালটি। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে অন্ধকারে ছিল ম্যুরালটি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ম্যুরালটির নিচে বীরশ্রেষ্ঠদের নামের লেখাগুলো উঠে গিয়েছিল একসময়। এই নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নজরে আসে প্রশাসনের। অবশেষে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ‘সূর্য সন্তান’ ফলকে লাইট লাগানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ করে ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল।
কিন্তু আলোকিত করে কী হল? আবারো কেন অন্ধকারে এই সূর্য সন্তানদের ফলক? এমন অনেক প্রশ্নই অনেকের মনে মনে।
ম্যুরালটির পাসে কথা হয় বাপ্পি নামের এক পথচারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই অন্ধকারে ছিল সূর্য সন্তানদের ম্যুরালটি। গতবছর এটার মধ্যে লাইট লাগানো হয়েছিল। সবকিছু ঠিক করা হয়েছিল। হঠাৎ করেই কিছুদিন থেকে দেখছি এটা আবারো অন্ধকারের মধ্যে পরে আছে। দেখে খারাপ লাগল। যদি এটাকে আবারো আলোকিত করে দেওয়া হয় তাহলে অনেক ভালো হবে। যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি সোনার এই বাংলাদেশ তাদের স্মৃতিকে কেউ যেন অবমূল্যায়ন না করে সকলের প্রতি এই অনুরোধ জানাচ্ছি।’
ঠাকুরগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদর উদ্দীন বদর জানান, যাদের জন্য আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি আজ ঠাকুরগাঁওয়ে তারাই অবহেলিত। শুধু এটা নয়, যখন দেখি কেউ শহীদ মিনারে জুতা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে তখন খুব কষ্ট হয়। নতুন প্রজন্মের অভিভাবক ও তাদের সন্তানদের নৈতিকতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের বিষয়ে তারা কেন জানি জানতে আগ্রহী না। প্রশাসন যদি বড় মাঠের শহীদ মিনারটি সারা বছর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে তাহলে ভাষা শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে।’
ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহা. সাদেক কুরাইশী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ম্যুরালটিতে লাইট লাগানো হবে।’
অপরদিকে জেলা প্রশাসক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এই ম্যুরালটি আলোকিত ছিল, হয়তো কোনো কারণ বসত এটি আবারো অন্ধকারের মধ্যে পড়েছে। এটি যদিও জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানের মধ্যে পরে, আমরা এটার ব্যাপারে জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা বলব।’