মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন করতে চেয়েছিল। তাই ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারের জন্য একটি কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ।
বুধবার (২৬ আগস্ট) রাতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত বিশেষ ভার্চুয়াল ওয়েবিনারে এই দাবি জানান বক্তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলা বিচারের সময় দেখি, সাক্ষীরা বলছেন- বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছেন আমাকে এইখানে হত্যা কর। মানুষ কিন্তু তার জীবন বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি তা করেননি। বঙ্গমাতা খুনিদের বলেছিলেন, আমাকে এখানেই হত্যা করো, আমি কোত্থাও যাবো না। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন, একটা দেশকে পরিচালনা করার যে অবকাঠামো দরকার সেটা হচ্ছে একটা সংবিধান। একটা দেশ যখনই উদীয়মান হচ্ছিল, ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, গণচীন, আমরা অলৌকিকভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছি। এই বইগুলো পড়লে মনে হয় বঙ্গবন্ধু আমাদের সঙ্গেই আছেন। এই বইগুলো আমাদের পড়তে হবে এবং নতুন প্রজন্মকেও পড়াতে হবে। রেডিও-টিভিতে বইগুলোর উপর প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে এবং বিজয়ীদের পুরস্কৃত করতে হবে। এভাবে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে জানতে উদ্বুদ্ধ হবে।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, সবচেয়ে জঘন্যতম যেটা- ৯ এপ্রিল ১৯৭৯ সালে ইন্ডেমিটি অধ্যাদেশে জিয়াউর রহমান স্বাক্ষর করেন, যা পার্লামেন্টে উঠেছিল ৬ এপ্রিল। এই আইনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রশ্রয় দেন জিয়াউর রহমান। একইভাবে ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার মদদ দেন খালেদা জিয়া। একইভাবে যেমন জাতির জনকের হত্যাকারীদের মদদ দিয়েছেন জিয়া, তেমনভাবেই তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার খুনিদের প্রশ্রয় দেন। যারা সেনাবাহিনীকে ভুল বুঝিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করেছিল তা কমিশন গঠন করে রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যদি জাতি প্রকৃত অপরাধীদের না চিনতে পারে তাহলে কোনো দিনই জাতীয় বেইমানদের মুখোশ উন্মোচন হবে না। একুশে আগস্ট খালেদা জিয়া জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে খুনিদের দেশ থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। এখন আমার মনে হয়, শেখ হাসিনাকে রক্ষা না করলে বাংলাদেশ রক্ষা হবে না, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রক্ষা হবে না, তেমনিভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ রক্ষা হবে না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালের পরাজিত শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলীন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তিনি আইন মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন- অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করে জিয়া সহ যারা এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত ছিল তাদের সবার মরণোত্তর বিচার করা হোক। যাতে করে জাতি জানতে পারে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনের সঙ্গে একমত পোষণ করে অবিলম্বে কমিশন গঠনের জন্য আইনমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করেন। একুশ বছর আমরা পিতা-মাতা হত্যার বিচার পাইনি।