কক্সবাজার: জরুরি সেবার জাতীয় হেল্প ডেস্ক ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে পুলিশের সাহায্য চেয়ে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছে কক্সবাজারের এক কলেজছাত্রী। তার নাম ছমিরা আক্তার (১৯)।
কলেজছাত্রী ছমিরা আক্তার বর্তমানে রুমালিয়ারছড়া গরুর হালদা এলাকার আবু তাহেরের মেয়ে ও কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছমিরার পরিবারের প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে একা পেয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখে। অনেক চেষ্টার পরও তিনি এ জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে তিনি জরুরি সেবায় নিয়োজিত জাতীয় হেল্প ডেস্ক ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে পুলিশের সাহায্য চান। তারপর কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের একটি টিম গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। গুরুতর আহত ছমিরা এখন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টোপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন নির্মম নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রী ছমিরার সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের।
ছমিরা বলেন,‘ভাইয়ের অপরাধের অজুহাতে এলাকার সমাজ কমিটির নেতারা আমার পরিবারকে ঘর থেকে বের করে দেয়। তাই আমরা সবাই বাড়ির বাইরে ছিলাম। বুধবার দুপুরে বাড়িতে এসএসসির সার্টিফিকেট আনতে গেলে আব্দুল খালেকের লোকজন আমাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে আমাকে বাসার মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে আমি আমার কাছে থাকা মোবাইল থেকে জরুরি সেবার নিয়োজিত জাতীয় হেল্প ডেস্ক ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করে পুলিশের সাহায্য চাই। এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ এসে আমাকে মুক্ত করে। এখন আমি ভালো আছি।’
ছমিরা আরও বলেন,‘ওই সমাজ কমিটির নেতারা আমার পরিবারকে বিভিন্ন অজুহাতে এলাকা ছাড়া করতে চায়। তাই তারা দীর্ঘদিন ধরে একটা পরিকল্পনা করে আসছিল। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
ছমিরার প্রতিবেশী খোরশিদা বেগম জানান, ছমিরার ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুবক হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ছমিরাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয় সমাজ কমিটি। এক পর্যায়ে তাদের বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বুধবার ছমিরা তার সার্টিফিকেটের জন্য আসলে তাকে বাড়িতে প্রবেশে বাধা দেয় সমাজ কমিটির নেতা আব্দুল খালেক। তারপরও সে সার্টিফিকেটের কথা বলে বাড়িতে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে বেধড়ক পেটানো হয়। এরপর বাড়ির ভেতরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
প্রতিবেশী নুরে আলম বলেন, ‘আমার বাড়ি দিয়ে যাওয়ার পথে এক যুবতীকে মারধর করেছে কিছু যুবক। আমি বাধা দিতে গেলে তারাও আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এরপর পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
ছমিরার বড় বোন পারভিন আক্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন,‘আমার বোনকে তারা বেধড়ক পিটিয়ে নির্যাতন করেছে। যদি সে জরুরি সেবায় নিয়োজিত জাতীয় হেল্প ডেস্কে ফোন না দিত তাহলে তাকে বড় ধরনের বিপদে পড়তে হত। ফোন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও এসেছে। তাই আমার বোন রক্ষা পেয়েছে। আমি এই নরপশুদের শাস্তি চাই।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘৯৯৯ নাম্বারের মাধ্যমে আমাদের কাছে খবর আসে এক কলেজছাত্রীকে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। তাৎক্ষণিক একটি মোবাইল টিম পাঠিয়ে ওই কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আসামিদের আটকে পুলিশের অভিযান চলছে।’
তবে অভিযুক্ত আব্দুল খালেক বার্তা২৪.কমকে জানান, এসব মিথ্যা কথা। কিছুদিন আগে একটা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। যার নেতৃত্বে ছিল ছমিরার ভাই। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ওই পরিবারটি পালাতক রয়েছে। এরপর সমাজ কমিটি বাড়িটি তালাবদ্ধ করে দেয়। কিন্তু ছমিরা সমাজ কমিটির কথা না শুনে তালা ভেঙে ফেলে। তাকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।