সময়ের পরিক্রমায় নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ৭০ বছরে পৌঁছালো মোংলা বন্দর। দিবসটি উপলক্ষে করোনাকালে স্বল্প পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে কিছু কর্মকাণ্ডের।
মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) মোংলা সমুদ্রবন্দর ৭০ বছরে পা রাখলো। এ উপলক্ষে কোনো আড়ম্বড়তা ছাড়াই স্বাস্থ্যবিধি ও সচেতনতা মেনে র্যালি ও আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-সচিব ও বন্দর চেয়ারম্যানের পার্সোনাল সেক্রেটারি মো. মাকরুজ্জামান।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, মোংলা বন্দর বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। এটি খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার পশুর ও মোংলা নদীর মোহনায় অবস্থিত। এ বন্দরে মোংলা ইপিজেড এরও অবস্থান। বন্দরটি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রথমে এই বন্দর গড়ে ওঠে মোংলার অদূরে দাকোপের চালনা থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। বন্দরটি ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়।
বন্দর চালু হওয়ার ১১ দিনের মাথায় সর্বপ্রথম বিদেশি জাহাজ ভিড়ে। প্রথমে এটি চালনা বন্দর নামে পরিচিত ছিল। তবে সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে মোংলা সুবিধাজনক অবস্থানে হওয়ায় পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মোংলায় স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে বন্দরটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এবং প্রতিবছর প্রায় ৪০০টি জাহাজ এখানে নোঙ্গর করে। এতে গড়ে ৩ মিলিয়ন মেট্রিকটন পণ্যের আমদানি-রপ্তানি হয়। বন্দরে রয়েছে ১১টি জেটি, ৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ ও ১২টি ভাসমান নোঙ্গর স্থান। নাবিকদের জন্য হিরণ পয়েন্টে রয়েছে একটি রেস্ট হাউজ।
আরো জানা যায়, পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান বন্দরের সঙ্গেই মোংলা বন্দরের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তবে প্রধানত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার জাহাজগুলো এই বন্দরে বেশি নোঙর করে থাকে। সৃষ্টির পর থেকে এ বন্দরটি দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। সম্প্রতি মোংলা বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ভারত, ভুটান ও নেপালের সাথে সরকারের চুক্তির ফলে এ বন্দরে নতুন করে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত, নেপাল, ভুটানকে মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে; যার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়কে সামনে রেখে বন্দর আধুনিকায়নের জন্য উন্নয়নের সকল কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সাথে এ বন্দরের যোগাযোগ আরো সহজ হবে এবং বন্দরের কার্যক্রম আরো বেড়ে যাবে। দক্ষিণ বাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে মোংলা বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তাই বন্দরকে গতিশীল রাখতে সরকারসহ সবাইকে এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি করে বন্দরকে সচল ও কর্মমুখর রাখতে হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বার্তা২৪.কমকে বলেন, মোংলা একটি সম্ভাবনাময় বন্দর। ১৯৫০ সালে যাত্রা করার পর থেকে নানামুখী দুঃসময় পার করেছে বন্দরটি। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী এ বন্দরের প্রবেশ মুখ ও পশুর নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটি প্রায়ই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে ছিল। বর্তমান সরকারের নানামুখী উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে ঘুরে দাড়ায় বন্দরটি। আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক চাকাও দ্রুত ঘুরতে থাকে। লোকসান থেকে লাভজনক অবস্থান করে নেয় দেশের বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দরটি।
তিনি আরো বলেন, বিশেষত এ বছরের নভেম্বর মাসে বন্দরে মোট ১০৬টি জাহাজ অবস্থান করে রেকর্ড তৈরি করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর আগে বন্দরের ইতিহাসে কখনো এতগুলো জাহাজ আসেনি। সম্ভাবনাময় এ বন্দরটিকে গতিশীল করার জন্য এ অঞ্চলের মানুষ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।