ধ্বংসের পথে কেপি বসুর বাড়ি

খুলনা, জাতীয়

সোহাগ আলী, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 13:11:06

ঝিনাইদহ: সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে অবস্থিত গণিতবিদ কালীপদ (কেপি) বসুর বাড়িটি। তবে অযত্ন আর অবহেলায় এখন সেটি ধ্বংসের পথে। সংশ্লিষ্ট মহলের তদারকি না থাকায় দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে বাড়িটি।

জানা যায়, কেপি বসু ১৮৬৫ সালে হরিশংকরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মহিমাচরণ বসু। নিজ গ্রামের পাঠশালায় হাতে খড়ি হয় তার। বাল্যকাল থেকে গণিতে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান তিনি। গ্রামের পাঠশালার শিক্ষক নাছিম বিশ্বাসের কাছ থেকে জটিল অংকের সমাধান করার শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি। এরপর তিনি লর্ড রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং এখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৮৯২ সালে তিনি ঢাকা কলেজে গণিত শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু ওই কলেজের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

শিক্ষকতা জীবনে পাঠদানের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি। তার ‘আধুনিক অ্যালজাবরা’ বইটি গণিত অধ্যয়ন ও অনুশীলনের পথকে সুগম করেছে। এছাড়া তিনি অসংখ্য নতুন অংক উদ্ভাবন করে এ শাস্ত্রের কলেবর বৃদ্ধি ও উত্কর্ষ সাধন করেছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি অ্যালজাবরা ও জ্যামিতি শাস্ত্রের গবেষণা চালিয়ে গেছেন। তার ঐকান্তিক সাধনায় ‘অ্যালজাবরা মেডইজি’, ‘মডার্ন জিওমেট্রি’ ও ‘ইন্টারমিডিয়েট সলিড জিওমেট্রি’ প্রভৃতি গ্রন্থ রচিত হয়।

এদিকে ১৯০৭ সালে হরিশংকরপুর গ্রামের নবগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে নয় বিঘা জমির উপর একটি বাড়ি নির্মাণ করেন তিনি। বাড়ি নির্মাণের জন্য বিদেশি কাঠ ও সৃজনশীল কারুকাজ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বাড়ি থেকে সিঁড়ি নামানো হয় ওই সময়ের প্রমত্তা নবগঙ্গা নদীতে। বাড়িটির অপরূপ সৌন্দর্য এখনো গ্রামের মানুষকে বিমোহিত করে। বাড়ির নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন দর্শনার্থীরা হরিশংকরপুর গ্রামে ভিড় করেন।

তবে অযত্ন আর অবহেলায় বাড়িটি দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে বাড়িটি। এরই মধ্যে বাড়ির বেশ কয়েকটি ভবনের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় অধিকাংশ ভবনই পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। ঐতিহাসিক এ বাড়িটি সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছে দর্শনার্থীরা।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, কপি বসুর স্মৃতি রক্ষার্থে তার বাড়িটি সংস্কার করে একটি দর্শনীয় স্থানে রূপ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের অভাবের কারণে সেটি সম্ভব হয়ে উঠছে না। তবে দ্রুত বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর