একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশন শুরু হচ্ছে সোমবার। শীতকালে শুরু হওয়ায় ইংরেজী নববর্ষের প্রথম অধিবেশনকে শীতকালীন অধিবেশন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪ টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হবে।
কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী কার্যউপদেষ্ঠা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের সময়কাল চূড়ান্ত হয়। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে বিগত কয়েক অধিবেশন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়নি। এবারও তাই হতে পারে।
তবে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানাগেছে একাদশ অধিবেশন আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতে পারে। মোট ১০-১২ কার্য দিবস অধিবেশন চলতে পারে। সংবিধান অনুযায়ী ইংরেজী নববর্ষের শুরুর অধিবেশনে দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি। সোমবার অধিবেশনের শুরুতেই ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় সংসদ সদস্যগণ বক্তব্য রাখবেন। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার প্যানেল সভাপতি মনোনীত করবেন। এরপর শোক প্রস্তাব, তারপরই ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের কার্যসূচি শেষ হবে।
প্রথম দিন বিকাল সাড়ে চার টায় অধিবেশন শুরু হলেও শীতের কারণে পরবর্তী দিনগুলো সকাল ১১ টায় অধিবেশন শুরু হবে বলে জানা গেছে।
সোমবার বিকেলে অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংসদের উত্তর প্লাজা দিয়ে আইন সভা ভবনে প্রবেশ করবেন, যা প্রেসিডেন্ট’স প্লাজা নামেও পরিচিত। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবছর ফুল দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। তবে এবার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার জন্য তা করা হবে না।
আবার প্রতিবছর শীতকালীন এ অধিবেশন সাধারণত দীর্ঘ হলেও করোনা মহামরির কারণে এবারের এ অধিবেশন বিরতী দিয়ে ১০-১২ টি কার্যদিবস চলবে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানান গেছে।
তবে এ অধিবেশনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ হবে বলে সচিবালয়ের আইন শাখা জানিয়েছে। রাষ্ট্রপতির ভাষনের ওপর আলোচনার মধ্যে অন্তত ৮-১০ টি বিল পাশ ও ৫-৭ টি বিল উত্থাপিত হবে বলে আইন শাখা জানিয়েছে। ইতিমধ্যে আইন শাখায় ৬-টি বিল জমা পড়েছে এবং আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে আরো বেশ কয়েকটি বিল জমা পড়বে বলে জানা গেছে।
যেসব বিল ইতিমধ্যে জমা পড়েছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিল-২০২১, ইন্টারমিডিয়েট এন্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (সংশোধন) বিল-২০২১, আয়োডিন যুক্ত লবণ বিল-২০২১, বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রন, সংশোধন) বিল-২০২০, কোম্পানী আইন বিল-২০২০ ইত্যাদি। আরো বেশ কয়েকটি বিল পাশ ও উত্থাপনের জন্য পাইপ লাইনে আছে বলে সংসদের আইন শাখা সূত্রে জানা গেছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালের অন্যান্য অধিবেশনের মতো এই অধিবেশনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত হবে। এ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ কভার করার জন্য করোনা টেস্টে নেগেটিভ সাংবাদিকদের প্রবেশাধীকার দেয়া হবে। মাত্র একদিনের জন্য তারা সংসদ অধিবেশন কভার করতে পারবেন। অন্য দিনগুলো সংসদ টিভি দেখে সংবাদ সংগ্রহের জন্য আহ্বান জানিয়েছে সংসদ গণসংযোগ বিভাগ। এ অধিবেশনে এমপি মন্ত্রীদেরও করোনা টেস্টে নেগেটিভ হলে প্রবেশাধিকার দেয়া হবে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
ইতিমধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে করোনা টেস্ট কার্যক্রম চালু রয়েছে। সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিন রাষ্ট্রপতির ভাষণ উপলক্ষে অধিক সংখ্যক সংসদ সদস্যদের উপস্থিতি থাকলেও পরের দিনগুলো রোস্টার ভিত্তিতে এমপিদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, যেহেতু করোনা মহামারী এখনো রয়েছে, সে কারণে বিগত অধিবেশন গুলোর মতো এ অধিবেশনেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলবে। প্রতিদিন ৮০-৯০ জন সংসদ সদস্যকে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন চিপ হুইপের দপ্তর। এ ছাড়া বয়স্ক ও অসুস্থ সদস্যদের উপস্থিত হতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। স্পিকার জানান, তবে এ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা ছাড়াও বিধি অনুযায়ী আইন পাশ, বিল উত্থাপণ এবং অন্যান্য কার্যক্রমও যথারীতি চলবে।
এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের দশম ও বিশেষ অধিবেশন গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয়ে ২০ নভেম্বর রাতে শেষ হয়। এ অধিবেশনে মোট ৯টি বিল পাস করা হয়।