নব সূর্যের আলোকধারায় স্নাত নতুন দিনে সূচিত হলো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে ভাষার মাস আশার ছোঁয়া জাগিয়েছে সবার মধ্যে। কারণ, বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর অন্যতম একটি রূপে প্রবেশ করেছে ভ্যাকসিন যুগে। অচিরেই সর্বস্তরে টিকাকরণের মাধ্যমে মহামারির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ সম্পন্ন হবে।
মায়ের ভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালির মহান আত্মত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখ শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, বিশ্ব ইতিহাসেরও এক গৌরবময় দিন। অমর একুশে তাই বাঙালির জাগরণের ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামী ঐতিহ্যের পথরেখায় এক অনির্বাণ প্রেরণার নাম।
১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পাকিস্তানি পুলিশের গুলিবর্ষণে শহীদ হন রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত সহ অনেকেই।২০১০ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
একুশের ভাষা আন্দোলনের চেতনায় বাঙালি অর্জন করে সাংস্কৃতিক অধিকার। একুশের ধারাক্রমে অর্জিত হয় আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ এবং বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয় সম্পন্ন হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পথে স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাধ্যমে।
মহান ভাষা আন্দোলনে জারিত একুশের চেতনা বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শক্তি যুগিয়েছে। লড়াই, সংগ্রাম, আন্দোলন ও প্রতিবাদ-প্রতিরোধে একুশের প্রেরণায় বাঙালি বার বার বিজয়ী হয়েছে। একুশ বাঙালিকে দিয়েছে মাথা নত না করার শিক্ষা।
বাঙালির জাতীয় ইতিহাস ও রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় একুশে হলো এক আলোকস্তম্ভ। চেতনার চিরজাগ্রত বাতিঘর। এক বছর পরেই ভাষা আন্দোলন স্পর্শ করবে ৭০ বছরের ঐতিহাসিক মাইলফলক। একই সাথে উন্নয়ন, অগ্রযাত্রায় বাঙালি পালন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী।
২০২১ সালের এই সঙ্কুল ফেব্রুয়ারিতে একুশের চেতনাদীপ্ত বাঙালি জাতি আবারো ঐক্যবদ্ধ শপথে উজ্জীবিত হবে রোগ, জরা, মারী, দারিদ্র্য, অপুষ্টি, অশিক্ষা, অন্যায় ও অন্ধকারের বিরুদ্ধে। অপরাজেয় বাংলার বীর বাঙালি সম্মিলিত কণ্ঠে উচ্চারণ করবে বিজয়ের সঙ্গীত।