সর্বাত্মক লকডাউনে নাগরিক চলাচল নিয়ন্ত্রণের কারণে ভোগান্তি হলেও বিগত দিনগুলোতে ঢাকায় চোখে পড়েনি চিরচেনা জ্যামের চিত্র। জরুরি সেবার আওতাধীন যানবাহনগুলো বাদে ব্যক্তিগত গাড়ি আর রিকশার দখলেই আছে ঢাকার রাস্তা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ নাগরিকদের খুব একটা ঘরের বাহির হতে দেখা যায়নি।
তবে রোববার (১৮ এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর চিত্র অনেকটাই পালটে গেছে। রাস্তায় চোখে পড়েছে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি, প্রাইভেট কার, ব্যক্তিগত ও ভাড়ায় চালিত মোটর বাইক, অল্প সংখ্যক সিএনজিসহ রিকশার আধিক্য ছিলো উল্লেখ করার মতো। যেন ট্রাফিক দাঁড়ালেই নগরে জ্যাম লেগে যাবে!
বেলা ১১ টা বেজে ১৫ মিনিট। রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার সড়কে যানবাহনের জটলা। প্রথম দেখায় সাধারণ পুলিশ চেকিংয়ের কারণে সৃষ্ট জটলা মনে হলেও আসলে এটি সিগন্যাল জনিত যানজট! প্রাইভেট কারে কিছুক্ষণ বসে থেকে পরিস্থিতি বুঝে উঠতে না পেরে কৌতুহল নিয়েই গাড়ি থেকে নেমে আসেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসক।
রিয়াদ হোসেন নামের ওই চিকিৎসক সামনে পেছনে গাড়ির জটলা দেখে বিস্ময় নিয়ে বলেন, এতো জ্যাম লেগে গেছে। মানুষ তো ঘরেই থাকতে চায় না। এত এত গাড়ি রাস্তায় থাকলে বিধিনিষেধ আর নির্দেশনা দিয়ে কী হবে!
কথা শেষ না হতেই পাশে দাঁড়ানো এক রিকশা চালক গলার গামছায় কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সেই চিকিৎসককে উদ্দেশ্য করে বললেন, স্যার প্যাট(পেট) তো আর লকডাউন মানে না। ঘরে খাওন নাই তাই ঘরের বাইর ওয় মানুষ। কামাই রুজি বন্ধ থাকলে মানুষের প্যাটে ভাত যাইবো না। খালি প্যাটে মাথা কাজ করে না।
এর মধ্যে সিগন্যাল ছেড়ে দিলে যথা সম্ভব দ্রুত সময়ের মধ্যে যে যার মতো সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।
১১ টা বেজে পঞ্চাশ মিনিট। রাজধানীর কাটাবন সিগন্যালের দুই পাশেই দীর্ঘ যানবাহনের সারি।এখানেও বিভিন্ন যানবাহনে আটকা থাকা সাধারণ যত্রীদের মধ্যে কৌতুহল 'রাস্তায় কি জ্যাম লাগলো?' এক রিকশা চালক রিকশা রেখে সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখে এসে জানালেন, 'জ্যাম লাগছে রাস্তায়।' পাশে থাকা এক মোটর বাইক চালক বললেন, মুভমেন্ট পাসের কারণে রাস্তায় বেশি মানুষ দেখা যাচ্ছে। এই মুভমেন্ট পাস না থাকলে এত মানুষ ঘরের বাইরে আসার সাহসই পেতো না। যাদের জরুরি দরকার তাদের জন্য এই পাস উপকারী হলেও বেশিরভাগ মানুষই এটার অপব্যবহার করছে।
নিজেকে ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে এক রিকশা আরোহী তার কথায় দ্বিমত পোষণ করে বলেন, বিষয়টা মোটেও সেরকম নয়। ১৪ তারিখ থেকে গতকাল পর্যন্ত নানা ছুটি কাটিয়েছে সারাদেশের অধিকাংশ মানুষ। তাই রাস্তায় তেমন কোন মানুষ দেখা যায়নি এতদিন। আজ আমি অফিসের প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েছি। কাজ না থাকলে বের হতাম না নিশ্চয়।
এদিকে নগরীর ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এসব এলাকার স্থায়ী চেকপোস্টগুলোতে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত তৎপর ছিলো পুলিশ। মোটর বাইক ও প্রাইভেট কারগুলো খুব গুরুত্বসহকারে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, মুভমেন্ট পাস দেখে তারপর নাগরিকদের যাত্রা নিশ্চিত করছেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। কাগজপত্রে অসামঞ্জস্যতা থাকলে বিধি অনুযায়ী মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে বাইক চালকদের। তবে বিগত কয়েক দিনের তুলনায় আজ বেশ কিছুটা নমনীয় আচরণ করতে দেখা গেছে আইন শৃঙ্গলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ সদস্যদের।
সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে ধানমন্ডি রাসেলস স্কয়ার পুলিশ বক্সের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, আমরা মানুষকে সচেতনতার বার্তা দিতে পারি মাত্র।কিন্তু নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা নিজেকেই ভাবতে হবে। জোর করে, জরিমানা করে কাউকে সচেতন করা যায় না।লকডাউনের শুরুর দিন থেকে দেখেছি বাহিরে আসা অধিকাংশ মানুষই খুবই সিলি কারণে ঘরের বাহির হয়েছে। এটা মোটেও কাম্য নয়।