২০১৩ সালের এই দিনে (২৪ এপ্রিল) সাভারে ধসে পড়েছিল রানা প্লাজা ভবন। এসময় ইট-কংক্রিটে চাপা পড়ে হারিয়ে যায় সহস্রাধিক তাজা প্রাণ। এসব প্রাণের মধ্যে গাইবান্ধার লিপি বেগমেরও মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। এই লিপি বেগমের রেখে যাওয়া একমাত্র মেয়ে জেরিন আক্তারের (১০) এখন ঠাঁই হয়েছে দাদীর কোলে। বৃদ্ধা দাদী জেলেখা বেগমের আদর-যত্নে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে জেরিন।
শনিবার (২৪ এপ্রিল) গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর (বুড়িভিটা) গ্রামের বৃদ্ধা জেলেখা বেগমের পাশে বসে থাকতে দেখা যায় মা হারা জেরিন আক্তারকে। এসময় মায়ের মৃত্যুর ঘটনা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল জেরিন।
জানা গেছে, ওই গ্রামের জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ছিলেন লিপি বেগম। স্বপরিবারই ঢাকায় থাকতেন। জীবিকার তাগিদে জিল্লু চালাতেন রিকশা। লিপি বেগম নিয়েছিলেন গার্মেন্টেসের চাকরি। আর বাসায় থাকতো একমাত্র কন্যাশিশু জেরিন আকতার। স্বামী-স্ত্রী রোজগার করে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন, এমন স্বপ্নে মনোযোগ দিয়ে চাকরি করছিলেন সেই রানা প্লাজা ভবনে। ভবনটির তৃতীয় তলার ডি-লাইনের সুইং হেলপার ছিলেন লিপি।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল নিয়ম মাফিক কর্মস্থলে কাজ করছিলেন। এরই মধ্যে সকাল পৌনে ৯ টার দিকে ভেঙে পড়ে ভবনটি। এ ভবনের ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা হয় লিপির মরদেহ। উদ্ধারের ১১ দিন পর অদরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে লিপির বীভৎস লাশ গ্রহণ করেন স্বামী জিল্লু মিয়া। শোকের কাতর শুরু হয় স্বজনদের। কাদঁতে থাকে শিশু জেরিন আক্তার। এ ঘটনার আট বছর হলেও আজ কান্না থামেনি জেরিনের। এখনো মায়ের শোক বুকে ধারণ করে কাঁদছে জেরিন।
নিহত লিপি বেগমের শাশুরি জেলেখা বেগম জানান, জিল্লু মিয়া তার বউকে হারানোর পর বিয়ে করেছে অন্যত্র। দ্বিতীয় এই বউকে নিয়ে জীপনযাপন করছে বগুড়ায়। রেখে যাওয়া কন্যাশিশু জেরিন আক্তারকে লালন-পালন করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি আরও বলেন, এমনিতে অভাব-অনটনের সংসার। অন্যদিকে মা হারা নাতনি জেরিনের লেখাপাড়া ও ভরণ-পোষণ যোগাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। তবুও চেষ্টা করা হচ্ছে জেরিনকে মানুষ করতে।