অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, অবৈধ দখলদারের নিকট সিটি করপোরেশন কোন বৈধ নোটিশ দেবে না। যারা দখলদার, তাদের জন্য মেসেজ হচ্ছে, যারা জায়গাটি দখল করেছেন আপনারা চলে যান। এই এলাকাতে আপনারা যারা আছেন অবৈধভাবে নিজেরা চলে যান না হলে, আমি চাই না আপনাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে যাই।
মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে গাবতলী বেড়িবাঁধ বালুর মাঠ সংলগ্ন পাম্প হাউস এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র এসব কথা বলেন। পরিদর্শনকালে সঙ্গে ছিলেন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মুহা. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব), সিভিল সার্কেল খন্দকার মাহাবুব আলম প্রমুখ।
মেয়র আতিক বলেন, এখানে ৫৩ একর জমি, যেটি ওয়াসার অধিগ্রহণ করা ছিল। সেই জায়গাটিও দখল হয়ে গেছে। পানির আঁধারের জন্য মোট ১৭১ একর জমি আছে কিন্তু আমরা বাস্তবে পেয়েছি মাত্র ৩ একর জমি। অর্থাৎ বাকি ১৬৯ একর জমি কিন্তু দখল হয়ে গেছে। আমরা যদি এটি দখলমুক্ত না করতে পারি তাহলে শ্যামলী, আদাবর, মিরপুর, ধানমন্ডির একটা অংশের এবং এখানে হাজারীবাগের পানিও আসে, সেটিও কিন্তু নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে না। এখানে পাম্প বসানো হয়েছে রিটেনশন পন্ডের জন্য।
তিনি বলেন, মন্ত্রীর মাধ্যমে আমরা পুনরুদ্ধার কাজ শুরু করলাম এবং এটি চলমান থাকবে। ঢাকা জেলা প্রশাসক আসছেন ওনি সীমানা নির্ধারণ করে দিবেন। মন্ত্রী বলেছেন আমাদের সর্বাত্মক সাহায্য করা হবে। এই মুহূর্তে সীমানা নির্ধারণ এবং খালকে পুনরুদ্ধার করে আরও খনন করতে হবে। তাহলেই জলাবদ্ধতার একটা বড় অংশ থেকে নগরবাসীকে রেহাই দিতে পারব।
মেয়র আরও বলেন, সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী পানির আঁধারের জন্য ওয়াসা ১৭১ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল। যার ১৬৯ একর অবৈধ দখলে। দখল উচ্ছেদ করে খাল খননের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হবে, এটি যদি একনেক সভায় পাশ হয়ে যায় তাহলে সাথে সাথে এই রিটেনশন পন্ডের পাশে কিভাবে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করতে পারি সেটি পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এবার সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করব।
অবৈধ দখলদারদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, যারা দখলদার তাদের জন্য মেসেজ হচ্ছে এই জায়গাটি যারা দখল করেছেন আপনারা চলে যান। অবৈধ দখলদারদের জন্য আমি কোন বৈধ নোটিস পাঠাবো না। এই এলাকাতে আপনারা যারা আছেন অবৈধভাবে, নিজেরা আপনারা চলে যান, না হলে আমি চাই না আপনাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে যাই।
আপনারা নিজের স্বার্থে করেছেন, এলাকার স্বার্থ দেখেননি। নিজের স্বার্থে নিজেরা এখানে ভবন করেছেন, এলাকার স্বার্থ দেখেন নাই, আমি অনুরোধ করছি আপনারা নিজের না, জনগণের স্বার্থ দেখবেন। নিজের জন্য কিছু করবেন না, এখানে যে রিটেনশন পন্ড এটি উদ্ধার করার জন্য আপনারা সবাই আমাকে সহযোগিতা করবেন। এই রিটেনশন পন্ড যদি উদ্ধার করতে না পারি তাহলে ৭ লাখ লোক পানিতে নিমজ্জিত থাকবে। সুতরাং এটি উদ্ধার করতে সকলের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা সকলে আমাকে সাহায্য করুন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পানি এসে এই রিটেনশন পন্ডে জমা হয়। সেই পানি পাম্পের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। অবৈধ দখলের কারণে পুরো পানির আঁধার এখন বহুতল ভবন, হাউজিং কোম্পানির প্রকল্প ও ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা করা হয়েছে। মোট ১৭১ একর অধিগ্রহণকৃত জায়গার মাত্র ৩ একর দখলমুক্ত বাকি ১৬৯ একরই অবৈধ দখলে। ফলে ওইসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সমাধানের বড় বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পুরো এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।