দেশজুড়ে রমজান আর বৈশাখের চলমান তীব্র তাপদাহকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ডাব আর তরমুজের বাজারে আগুন লেগেছে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে অনেকেই ক্ষোভ ঝাড়ছেন। পরিবারের জন্য প্রিয় ফল তরমুজ না কিনতে পেরে হতাশায় ভুগছেন। মৌসুমি এই ফলটির পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকে কেজি দরে তরমুজ বিক্রিকে ভোক্তাদের সঙ্গে বড় রকমের প্রতারণা ও চালবাজি আখ্যায়িত করছেন। কেজিদরে তরমুজ কিনতে চাচ্ছেন না তারা। কেউ কেউ ‘আঙুর ফল টক’ উপকথার মতো তরমুজ বয়কটের শ্লোগান দিচ্ছেন।
তরমুজের সঙ্গে ডাবের কদর বেশি থাকায় এক শ্রেনীর মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে অনেক বেশি। যা নিম্নবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্তের জন্য কষ্টকর।
বুধবার (২৮এপ্রিল) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে ঘুরে দেখা যায় খুচরা বাজারে এক কেজি তরমুজের দাম চলছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। বেশি ভালো মানেরগুলো ৬৫ থেকে ৭০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। এতে ৮ কেজির একটি তরমুজের জন্য ক্রেতার গুণতে হচ্ছে ৪৪০ থেকে ৫২০ টাকা। আর বড় ডাব ১০০-১২০টাকা, মাজারি ডাব ৮০-১০০ টাকা। ছোট ডাব ৫০-৮০ টাকা।
বুধবার কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, "তরমুজের সরবরাহ ঠিকই আছে, মানুষের চাহিদা আগের থেকে একটু বেশি। আমাদের বেশি দাম দিয়ে কেনা তাই বিক্রি করি বেশি দামে। কেজি প্রতি ১০-১৫টাকা বেড়েছে।"
কাওরান বাজারের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, "লকডাউনের’ কারণে বরিশাল ও খুলনা থেকে তরমুজ আসতে পারছে না। যে কারণে মোকামেই প্রতি কেজি তরমুজ ৪০ টাকা থেকে ৫২ টাকা কিনতে হচ্ছে আমাদের। সেই তরমুজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করাটা দোষের কি? এখানে আমাদের কিছু করার নেই।"
তরমুজের ভেতরে সিরিঞ্জ দিয়ে কৃত্রিম রং ঢোকানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "এগুলো অনেকেই করে, আমরা করি না। আর এর জন্য কৃষক দায়ী। তারা দাম বেশি পেতে অপরিপক্ক তরমুজ বিক্রি করে দেয়। পাইকাররা এগুলো কিনে বিপাকে পরে। তখন কিছু করার থাকে না।"
কাওরান বাজারের খুচরা বিক্রেতা আল মামুন বার্তা২৪.কমকে বলেন, "তরমুজের দাম তো অনেক বেশি। আমাদের কেনা বেশি দামে, তাই বিক্রিও বেশি দামে। আমরা এখান থেকেই ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে কিনি। বিক্রি করি ৫৫-৬০টাকা করে।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, "যেই তরমুজ গুলো ভিতরে লাল কম, সেগুলে কেটে দেখালে কাস্টমার নেয় না। তাই পাইকাররা লাল রং আর চিনি মিক্সার পানি সিরিঞ্জ দিয়ে তরমুজে ঢুকিয়ে দেয়। এ ছাড়া উপায় নাই। তাদের লস গুনতে হবে।"
এই দাম বৃদ্ধির কারণে নিম্ন মধ্যবিত্ত তো দূরের কথা, মধ্যবিত্তরাই পুড়ে ছারখার।
কাওরান বাজারের পাইকারি ডাব বিক্রেতা খাইরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, "গরমের সঙ্গে সঙ্গে ডাবের চাহিদা বেড়োছে, তা ছাড়া লকডাউনের কারণে ডাব কম আসছে। তাই দাম বেড়েছে।
নাখালপাড়া থেকে কাওরান বাজারে ডাব কিনতে আসা আহাদ বলেন, "গত সপ্তাহেও ডাব কিনেছি মধ্যম সাইজেরটা ৫০টাকা, এটা এখন দেখি ৯০ টাকা। বড়টা তো ১২০ টাকা। কিন্তু এত দাম বেড়েছে কিনতেই ইচ্ছে করছে না। আবার যেই গরম ডাব না খাইলেও সমস্যা।" সিন্ডিকেটের কারণেই ডাব ও তরমুজের দাম বাড়ছে বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা।
ফার্মগেট রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দা রহমান মিয়া বলেন,"গরম বেড়েছে বলে অনেক ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ডাব আর তরমুজের দাম বাড়িয়েছে। এত বছর যাবৎ ঢাকায় আছি, তরমুজের দাম এত বেশি হতে দেখি নাই। ২০০ টাকার তরমুজ এখন ৪৫০টাকা। আর ডাব তো খাওয়ার ব্যবস্থাই নেই।"
কিন্তু ক্রেতাদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আড়ৎদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। লকডাউনের অজুহাত দেখাচ্ছেন তারা।