করোনা প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকার সাথে সারাদেশের সব ধরনের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সারাদেশে শাটডাউনের সুপারিশও করেছে জাতীয় কারিগরি কমিটি। দূরপাল্লার যান চলাচল নিষিদ্ধ হলেও বন্ধ নেই ঢাকায় আসা ও ঢাকা থেকে বাহিরের গন্তব্যে চলাচল।
আনুষ্ঠানিকভাবে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যানবাহন বন্ধ থাকলেও ভাড়ায় চালিত মোটরবাইক, মাইক্রোবাস ও মিনিবাসে করে দূরের ভ্রমণ চলছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই। স্বাভাবিকের থেকে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়ায় এসব বাহনে যার যার গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা।
শুক্রবার (২৫ জুন) গাবতলী ব্রিজ সংলগ্ন পুলিশ চেকপোস্টে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেলো। চেকপোস্টের হাত বিশেক সামনেই কয়েকটি মোটরবাইক সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রী মনে হলেই এসব বাইকের চালকরা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এবং দূরপাল্লার গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। পাটুরিয়া ঘাট, সাভার, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর এবং পঞ্চগড়সহ সব জায়গাতেই যাত্রী পৌঁছে দিতে হাঁকডাক দিচ্ছেন তারা।
যাত্রীবেশে কথা হয় এক বাইকারের সাথে। দিনাজপুর যেতে চাইলে তার বাড়িও দিনাজপুর বলে সানন্দে রাজী হন এই বাইকার। ভাড়া চাইলেন তিন হাজার টাকা। ভাড়া কমানো যাবে কী না? এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বাইকার বলেন, ভাড়া এক পয়সাও কমানো যাবে না। তেলই খরচ হবে ৮০০ টাকা। আপনাকে একা নিয়ে যাওয়া ও আবার ঢাকায় ফেরত আসতে হবে।
রাস্তায় ঝামেলা হবে কিনা জানতে চাইলে নিজেকে আনসার সদস্য পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, আমি একজন আনসার সদস্য। আমাকে পুলিশ ধরবে ক্যান? এই দেখেন আমার বাইকের সামনে ও পিছে আনসারের স্টিকার।আমি প্রায় দিনেই এভাবে দূরপাল্লার ভাড়া মারি। পুলিশি ঝামেলা খুব কমই হয়। আর পুলিশ ধরলেও সেটা ম্যানেজ হয়ে যায়।
ব্রিজের উপরেই মাইক্রো ও ট্যাক্সিক্যাব দাঁড় করিয়ে রীতিমত টিকিটের মাধ্যমে যাত্রী সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। এসব মাইক্রো আর ট্যাক্সি যাচ্ছে পাটুরিয়াটা ঘাট, টাঙ্গাইল ও দিনাজপুরের মতো লকডাউন ঘোষিত এলাকায়।
এসব মাইক্রো ও ট্যাক্সিক্যাব চলাচল করছে গাবতলীর পরিবহন শ্রমিকদের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এসব যানবাহনে যাত্রী সংগ্রহ করে দেওয়ার বিনিময়ে ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা নিচ্ছেন এই চক্রটি। এমনটি জানিয়েছেন নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক মাইক্রোবাস চালক।
পাটুরিয়া, টাঙ্গাইল, বগুড়া ও দিনাজপুরগামী একাধীক যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রয়োজনের তাগিদে বাড়তি ভাড়া ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ভ্রমণ করছেন। অনেকেই বলছেন, পয়সা খরচের বিষয়টা মানা গেলেও এমন ভোগান্তি সহ্য হচ্ছে না। সেই ভোর থেকে অপেক্ষা করেও অনেকেই গাড়ি পাচ্ছি না।এভাবে আর কত দিন চলবে!
শ্রমিক আবু জেহেল। তিনি যাবেন দিনাজুরের ফুলবাড়িতে। এক মোটরবাইক চালকের সাথে কথা বলছিলেন ভাড়া নিয়ে। তিন হাজার টাকা ভাড়া চাওয়াতে আবু জেহেল বলেন, আমি এই টাকা কামাই করি এক সপ্তাহে। মনে হচ্ছে বাইক না প্লেনে যাইতেছি!
পঞ্চগড় থেকে ৩২ ঘণ্টা জার্নি করে প্রায় দশটি বাহন বদলে ঢাকায় এসেছেন মানস কুমার রয়। তিনি বলেন, ৩২ ঘণ্টায় প্রায় দশটি বাহন বদলে হাজার চারিক টাকা খরচ করে গাবতলী এসে পৌঁছালাম।
ভাড়ায় দূরপাল্লার যাত্রী টানা মোটরবাইকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ চেকপোস্টে দায়িত্বরত দারুস সালাম থানার উপ-পরিদর্শক নাজমুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা এসব বাইক ও বাইকে চলাচল করা যাত্রীদের ধরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তারা হাসপাতাল, রোগী বা চাকরির কথা বলছেন জিজ্ঞাসাবাদের সময়। তবুও এসব বাইকার ও বাইকে চলাচল করা যাত্রীদের লকডাউন চলছে এমন এলাকায় যেতে নিরুৎসাহিত করছি। কিন্ত কে শোনে কার কথা! আমরা সন্দেহ জনক বাইকারদের প্রচলিত আইনের আওতায়ও আনছি।