সেই পরাজিত শক্তি এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে

, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা ২৪ | 2023-08-23 13:13:13

আজ ভয়াল ২১ আগস্ট। আজ থেকে ১৭ বছর আগে, ২০০৪ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে অতর্কিতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশ, আহত মানুষের আর্তনাদ আর কাতর ছোটাছুটিতে তৈরি হয় বিভীষিকাময় মুহূর্ত। মারা যান আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী। সাংবাদিকেরাও আহত হন। ২০০৪ সাল থেকে দিনটি '২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস' হিসাবে পালন করা হয়।

২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। মূলত তখনকার প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাই ছিলেন গ্রেনেড হামলা পরিকল্পনাকারীদের টার্গেট। আওয়ামী লীগ বলছে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে সংগঠনের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যেই ওই ঘৃণ্য হামলা চালায় ঘাতক চক্র।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ১৫ আগস্ট ছোট্ট রাসেল বাঁচতে চেয়েছিল, ঘাতকরা তাকেও বাঁচতে দেয়নি। অর্থাৎ, খুনিদের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ যেন কোনোদিন এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না পারে। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা দেশের বাইরে ছিলেন। ১৯৮১ সালে আমরা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিই। কিন্তু এই আগস্ট মাসে, ২১ আগস্ট তাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। সেই পরাজিত শক্তি এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন 'সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী' শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা শুরু হয়।

বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। স্প্লিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। 

ওই দিন শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন শেখ হাসিনার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয়টি গুলি। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হন, তার শ্রবণশক্তি চিরদিনের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে কর্ডন করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ২১ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যারা এ দেশে ধর্মের নামে রাজনীতি করত। যার যার ধর্ম তার তার কাছে, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে হবে কেন?

তিনি আরও বলেন, আমাদের নেত্রীকে মারার জন্য ২১ আগস্টসহ ১৯ বার হামলা করা হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, বাঙালি সুখে শান্তিতে থাকবে, এটা যাদের ভালো লাগে না, তারাই ষড়যন্ত্র করছে। এরা ধর্মের নামে দেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চায়।

রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন পরাজিত হন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর