উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টি ও বানের পানিতে ভাসছে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১২টি জেলা। জেলাগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া।
এসব বন্যাকবলিত এলাকার গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষ ঘরে বন্দি হয়ে আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। আমন বীজতলা, আমন ধান ক্ষেত ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব তারা নোংরা পানি পান করছে। টয়লেট ডুবে যাওয়ায় যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করায় রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টা ধরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার নদ-নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এতে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম থেকে মধ্যাঞ্চলের চাঁদপুর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা পাড়ের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকতে পারে।
বর্তমানে যেসব নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সেগুলো হলো- দুধকুমর, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, আত্রাই, ধলেশ্বরী, পদ্মা ও মেঘনা। এর মধ্যে যমুনা অন্তত ৬টি পয়েন্টে বইছে বিপৎসীমার উপরে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যমুনা আরও টাঙ্গাইলের পুরাবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমা পার করতে পারে। বর্তমানে বিপৎসীমার সবচেয়ে উপরে আছে পদ্মা।
রাজবাড়ির গোয়ালন্দে এটি বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। শরীয়তপুরের সুরেশ্বর বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। আত্রাই বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার উপরে আছে বাঘাবাড়িতে। আর ধলেশ্বরী টাঙ্গাইলের এলাসিন পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে আছে। কুড়িগ্রামে ধরলা বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে শনিবার বেলা ৩টায় ৩৪ ও ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রংপুরে তিস্তা পারের মানুষ পানি কমা-বাড়ার মধ্যেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। পানি কিছুটা কমলেও গঙ্গাচড়ার ৩টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দি রয়েছে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া বাড়িঘরের মানুষের মাঝে দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এ উপজেলার ২০ হাজার মানুষ।
টাঙ্গাইলের বাসাইলে সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়কটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হিসাবে ব্যবহার হতো। তাই বাঁধটি ভেঙে নতুন করে বাসাইল উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ১০ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় রোপা আমনের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে পাহাড়ি ঢলের আঘাতে নিমজ্জিত রয়েছে প্রায় দেড়শ হেক্টর জমির আমন ফসল। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। অনেকে ঋণ করে আমন রোপণ করেছেন।