ফেনীতে পিকআপে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কার ঘটনায় নিহত ৬ জন নির্মাণ শ্রমিকের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে নিহতদের মরদেহ শনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টা থেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে তাদের মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মিরসরাই থেকে কাজ সেরে ফেনী শহরে ফেরার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর অংশের হাফেজিয়া মাদরাসা এলাকায় নির্মাণশ্রমিক বহন করা পিকআপ একটি কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় ছয়জনের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নিহতরা হলেন-ভোলা জেলার মনপুরা থানার চর ফয়জুদ্দিন এলাকার মো. ফারুকের ছেলে মো. আরিফ হোসেন (৩০), একই থানার দাসেরহাট গ্রামের মো. নুর হোসেনের ছেলে মো. জুবায়ের মনির, একই গ্রামের নুর আলমের ছেলে মহিউদ্দিন (২২), বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার পাতাবাড়িয়া এলাকার সাবুল শেখের ছেলে নাজমুল শেখ (২৮), একই জেলার শরণখোলা থানার দক্ষিণ রাজাপুর এলাকার সোবহান ফরায়জীর ছেলে সাদ্দাম ফরায়জী (২৫) ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার বালিগাঁও এলাকার আনার উদ্দিনের ছেলে মো. মারুফ মিয়া (১৯)।
এ ঘটনায় আরও অন্তত ৬-৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- জাহাঙ্গীর (৩০), সবুজ (২৫), নাগর মাঝি (৪০)। তারা সকলে ভোলা জেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
দূর্ঘটনা কবল থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া নুর উদ্দিন নামে এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, সহদেবপুর এলাকার সবুজের সঙ্গে ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের জন্য চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকায় ১৮ জন শ্রমিক গিয়েছিলাম। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ফেনীর হাফেজিয়া এলাকায় আমাদের বহনকারী পিকআপ হঠাৎ করে থেমে যায়। এ সময় পেছন থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান আমাদের গাড়িকে ধাক্কা দিলে গাড়িতে থাকা শ্রমিকরা দিগ্বিদিক ছিটকে পড়লে কাভার্ড ভ্যান তাদের রাস্তায় পিষে দ্রুতগতিতে চলে যায়।
রুহুল আমিন নামে নিহত নাজমুল শেখের এক স্বজন বলেন, নাজমুল কাজের সুবাদে ফেনীতে এসেছিলেন। তার আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। সকাল থেকে হাসপাতালের মর্গের সামনে অপেক্ষা করে এখন মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরছি।
নিহত আরিফের স্বজন রাকিব বলেন, আরিফ এক সপ্তাহ আগে ভোলা থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজে ফেনীতে আসেন। সোমবার রাতে খবর পেয়ে আমরা ভোলা থেকে এখানে এসেছি। থানায় কাগজপত্রের কাজ শেষ করে মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরছি।
মহিপাল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বলেন, পিকআপে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় নিহত ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই হাসপাতালের মর্গ থেকে তাদের মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে। কাভার্ড ভ্যানের চালক পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে এ দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে মরদেহ পরিবহন ও দাফনকাজের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে ফেনী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় জেলা প্রশাসন গভীরভাবে শোকাহত। জেলা প্রশাসক ডিসি সম্মেলনে যোগদানের জন্য ঢাকায় অবস্থান করলেও এই বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন। দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে মরদেহ পরিবহন ও দাফনকাজের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা প্রদান করা হবে।