রংপুর নগরীর বাহার কাছনা এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে অভিযানে যান তিন পুলিশ সদস্যসহ এএসআই পেয়ারুল ইসলাম। সেখানে ১৫১ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী পলাশকে আটক করেন তারা।
একপর্যায়ে পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে দৌড় দেয় পলাশ। তাকে ধরতে পেছনে ছোটেন পেয়ারুল। অনেকদূর গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীকে জাপটে ধরেন তিনি। তার তিন সহকর্মী তখন অনেক পেছনে। এ সুযোগে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পলাশ। ছুরিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েও হাল ছাড়েননি তিনি।
সহকর্মী ও স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পলাশকে তাদের কাছে তুলে দিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েন পেয়ারুল। তাকে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়। কিন্তু এএসআই পেয়ারুল ইসলামকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
এ ঘটনায় শোকাচ্ছন্ন পুলিশ বাহিনী। সাধারণ মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে এএসআই পেয়ারুল ইসলামের সাহসী কীর্তি। তিনি স্ত্রীসহ দুই ছেলে রেখে গেছেন।
পেয়ারুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া গ্রামে। তার বাবা আব্দুর রহমান চন্দ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
২০১১ সালের ১৫ জানুয়ারি পুলিশের চাকরি পান পেয়ারুল। পদোন্নতি পেয়ে ২০১৮ সালের অক্টোবরে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে এএসআই পদে যোগদান করেন। এরপর সাফল্যের সঙ্গে মাহিগঞ্জ থানা, গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) এবং সর্বশেষ হারাগাছ থানায় কর্মরত ছিলেন। হারাগাছ থানায় থাকাকালে তিনি একাধিক অভিযানে মাদক উদ্ধার ও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করেছেন।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে হারাগাছ থানার বাহার কাছনার তেলিপাড়া এলাকায় মাদক মামলার আসামি পলাশকে ধরতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন পেয়ারুল। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে মারা যান তিনি।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন পেয়ারুলের স্বজনসহ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ, উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান ও উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মারুফুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান বলেন, ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী পলাশকে আটক করেছেন পেয়ারুল। ছুরিকাঘাতে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত করেছিল পলাশ। পেয়ারুল জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালনে কতটা অবিচল।’
পেয়ারুলের বাবা, চাচা মেরাজুল ইসলাম, চাচাতো ভাই আব্দুস সালাম, আনোয়ারুল ও স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। স্বজনদের সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন সহকর্মীরা। তাদের বুকফাটা আর্তনাদে হাসপাতালে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
পেয়ারুলের চাচা মেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পেয়ারুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী জানান, এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় পলাশকে গ্রেফতার দেখানো হয়। শনিবার রাতে পারিবারিক কবরস্থানে পেয়ারুল ইসলামকে দাফন করা হয়েছে।