ড. কামালকে বয়োজ্যেষ্ঠ সম্বোধন করে প্রশ্নের জবাব দিলেন আইনমন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 20:38:55

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমি কিন্তু বিশেষজ্ঞ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে এই ব্যাপারে শক্তভাবে জবাব দিতে পারতাম। কিন্তু আমার বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভ্যাস নেই। সেই জন্য আমি করবো না। কিন্তু আমি অত্যন্ত সবিনয়ে বলবো যে, আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করি না।

রোববার (২৮ অক্টোবর) ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সদ্য যোগদানকৃত বিচারকদের জন্য আয়োজিত দ্বিতীয় ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারের সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনদিন মেয়াদী এ প্রশিক্ষণে জেলা জজ পদমর্যাদার ৪৫ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশ নিয়েছেন।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন জেলে কেন সে বিষয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে বৃহস্পতিবার কৈফিয়ত চেয়েছিলেন ড. কামাল। তিনি বলেন, 'আইনমন্ত্রী তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। কেন বন্দী করছ, এটা জনগণকে জানাও। তোমার বাবার বন্ধু হিসেবে আমাকেও জানাও।'

কৈফিয়ত দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। আমি বাধ্য হচ্ছি আজকে আইনটাকে পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য। সেটা হচ্ছে এই, যদি অন্য জেলায় মামলা থাকে। তার মানে হচ্ছে মামলাটি অন্য টেরিটরিয়াল জুরিশডিকশনে। সেই জেলা থেকে যদি অন্য জেলায় কোনো আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়, তাহলে যে জেলায় তাকে হাজির করা হয়েছে সেই জেলার বিজ্ঞ বিচারকের কিন্তু তার মামলাটা শোনার অধিকার নাই।’

‘তার কারণ হচ্ছে, যে তার কাছে মামলার নথিটা নাই। সেই কারণে তিনি দু’টো কাজ করতে পারেন। একটা হচ্ছে- তিনি আসামিকে যেই কোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সেখানে পাঠিয়ে দিতে পারেন অথবা তিনি বলতে পারেন মামলার নথি (ফাইলটা) তার কাছে পাঠানোর জন্য। তার জন্য একটা প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু আসামিকে সেই কোর্টে পাঠানোটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে এখানে বিজ্ঞ বিচারক তার বিচারিক অধিক্ষেত্র এবং অভিজ্ঞতা এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে যেই পদক্ষেপ নিয়েছেন সেইটা আইনসঙ্গত পদক্ষেপ বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।’

বে আইনি কাজের জন্য আইনমন্ত্রীর বিচার হতে পারে বলেও মন্তব্য করে ড. কামাল সেদিন বলেছিলেন, 'দ্রুত তোমার বিচার হবে। ১০ বছর পরে হলেও তোমার বিচার হবে। এসব কথা বলার জন্য আমাকে কী করবা? সর্বোচ্চ মেরে ফেলতে পারো, তাই তো? তোমার বিচার হবেই।'

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমরা কোন দিনই সংবিধান লঙ্ঘন করি নাই। আর সংবিধান লঙ্ঘন করার জন্য যদি কখনো আদালতে দাঁড়াতে হয় আমরা দাঁড়াবো।

ড. কামাল হোসেন সংবিধান (খসড়া)  প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন অথচ তারা যে সংবিধান দিয়ে গেছেন তার অনেক কিছুই আজকে ড. কামাল হোসেন অস্বীকার করছেন বলেও অভিযোগ করেন আনিসুল হক।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামীকাল আরপিও সংশোধন বিল মন্ত্রিসভায় উঠানো হবে। বিলটি পাশের জন্য বেশকিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে এবং তারপর জাতীয় সংসদে পাশ করতে হবে। তাই এ বিষয়ে আগামীকাল মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা চাওয়া হবে এবং মন্ত্রিপরিষদ যে নির্দেশনা দিবে সে মোতাবেক কাজ করা হবে।

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবীতে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য যেমন সহায়ক হবে তেমনি সঠিকভাবে বাস চালালে তা চালকদের জন্যও সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, তারা বোধহয় আইনটা সঠিকভাবে না বুঝেই ধর্মঘট করছেন। কারণ এই আইনে এমন কোন শর্ত বা প্রভিশন নাই যে অন্যায় না করা সত্ত্বেও চালকদেরকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। আমি তাদেরকে আহ্বান জানাবো তারা যেন এই পথ পরিহার করে।

বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকসহ আরো অনেকে বক্তব্য দেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর