উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েই পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে হামলা চালায়

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 02:23:12

হিন্দুদের আক্রমণে এক মুসলিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে’- এমন উসকানিমূলক পোস্ট দেন সৈকত মন্ডল। সেই পোস্টের সূত্র ধরে একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করেন রবিউল ইসলাম। মাইংকিংয়ে তিনি তৌহিদী জনতাসহ ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রতিরোধের ডাক দেন। এরপর সৈকত নিজে একটি উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে উত্তেজনাকর বক্তব্য দিয়ে হামলায় অংশ নেন।

সম্প্রতি রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুপল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম হোতা মো. সৈকত মন্ডল (২৪) ও সহযোগী মো. রবিউল ইসলামকে (৩৬) গাজীপুরের টঙ্গী থেকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টায় কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী এবং রংপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অপচেষ্টা করছে চক্রান্তকারীরা। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অভিযানে প্রায় ৩০ জনকে গ্রেফতার করে এরই মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ১৭ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরে পীরগঞ্জের বড় করিমপুর গ্রামে দুর্বত্তরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই ঘটনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে রংপুরে পীরগঞ্জ থানায় ৩টি মামলা দায়ের হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব সদরদফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১৩ এর একটি আভিযানিক দল শুক্রবার (২২ অক্টোবর) রাতে টঙ্গী এলাকা হতে পীরগঞ্জে হামলা ও অগ্নিসংযোগের অন্যতম হোতা সৈকত মন্ডল ও রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওই ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অরাজকতা তৈরির ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের লক্ষ্যে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার এবং মাইকিং করে হামলাকারীদের জড়ো করেন।

‘গ্রেফতার সৈকত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে স্থানীয় জনসাধারণকে উত্তেজিত করে তোলেন। তিনি হামলা ও অগ্নিসংযোগে অংশগ্রহণে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেন। তিনি গ্রেফতার রবিউলকে মাইকিং করে লোকজন জড়ো করতে নির্দেশনা দেন। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার সৈকত মন্ডল রংপুরের একটি কলেজের স্নাতকে অধ্যয়নরত। তিনি বিভিন্ন সময়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উসকানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিতেন ও শেয়ার করতেন।

ঠিক কী উদ্দেশ্যে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়েছিলেন সৈকত- জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, তার (সৈকত) ফেসবুক পেজে ২৭০০-২৮০০ ফলোওয়ার রয়েছে। সেটিকে কাজে লাগিয়েছেন ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য। পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত ইমেজ বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সৈকত তার ফেসবুকে পেজে বিভিন্ন ছোট-বড় ইস্যুতে উসকানিমূলক পোস্ট দিতেন। মূলত কুমিল্লার ইস্যুর পর থেকেই তিনি ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে যখন একটি ঘটনা ঘটে, তখন থেকে সৈকত একের পর এক উসকানিমূলক পোস্ট দিতে থাকেন। মূলত তার এসব পোস্ট দেখেই পীরগঞ্জে শত শত লোক জড়ো হয়েছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর