এক সময় বছরজুড়েই শ্রমিক আর পণ্যবাহী ট্রাকের কোলাহল লেগে থাকত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসা বাণিজ্য কমে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের পূর্ণ রফতানি নির্ভর এই স্থলবন্দর।
ব্যবসায়িরা বলছেন, ভারতে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখন অনেক পণ্যই রফতানি করা যাচ্ছে না। তাই এই বন্দরের ব্যবসা বাণিজ্যে ধ্বস নেমেছে।
তাদের দাবি, বন্দরটিকে সচল রাখতে ভারত থেকে আমদানি পণ্যের সংখ্যা বাড়াতে হবে। অন্যথায় এক সময় একবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতিত সকল পণ্য আমদানি সুবিধা দিতে হবে সরকারকে।
সরেজমিনে আখাউড়া স্থলবন্দরে গিয়ে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে সেভেন সিস্টার খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ত্রিপুরা রাজের্য আগরতলা দিয়ে আন্ত:বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে আমদানি-রফতানি ও যাত্রী পারাপারের জন্য আখাউড়া স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১০ সালে আখাউড়া স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে রূপান্তরিত করে সরকার। চালুর পর থেকেই এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৩২টি পণ্য ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্যে রফতানি হয়ে আসছিল।
প্রতিদিনই কয়েকশ ট্রাক ভারতে যেত তুলা, পাথর, সিমেন্ট, মাছসহ নানান পণ্য নিয়ে। ভারত থেকে আসতো হাতে গোনা কিছু পণ্য। ভারতে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম উন্নত হওয়ায় এখন অনেক পণ্যই রফতানি করা যাচ্ছে না।
গত কয়েক বছরে পণ্য রফতানি অনেক কমেছে। আগে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক মাছসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি হতো। সেখানে বর্তমানে তা ২৫ থেকে ৩০ ট্রাকে নেমেছে। আর এতে করে স্থলবন্দরের কয়েক শত ব্যবসায়ী ও কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বন্দরের ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে ভারত থেকে ৩০টি পণ্য আমদানি করার জন্য অনুমতি চেয়েছিল। সে সময় পাঁচটি পণ্যের অনুমতি দেওয়া হয়- ফুলের ঝাড়, রাবার, পান, বাশের তৈরি আসবাবপত্র ও গরু।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যে পণ্যগুলো আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেগুলোর চাহিদা নেই এই এলাকায়। তাই সরকারের কাছে অন্যান্য বন্দরের মত নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতিত সকল পণ্যের আমদানির অনুমতি চান তারা।
আখাউড়া স্থলবন্দরের শ্রমিক মো. মিলন মিয়া বার্তা২৪কে বলেন, ‘আগে প্রতিদিন শত শত ট্রাক মালামাল রফতানি হত। আমাদের কাজও হত অনেক। রফতানি কমে যাওয়ায় কাজ কমে গেছে। কাজ কমে যাওয়ায় অনেকেই অণ্য পেশায় চলে গেছে।’
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বাবুল বার্তা২৪কে বলেন, ‘সরকারের কাছে যে পণ্যগুলোর আমদানি সুবিধা চেয়েছিলাম, সেই পণ্যগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। বন্দরটিকে সচল রাখতে অন্যান্য বন্দরের মত নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতিত সকল পণ্য আমদানি করার সুযোগ দেওয়া হোক।’
আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুল ওয়াহাব মিয়া বার্ত২৪কে জানান, বর্তমানে এই বন্দরের শ্রমিকসহ ব্যবসায়ীদের পথে বসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অচিরেই এই বন্দর দিয়ে সকল পণ্যের আমদানি সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা শ্যামল কুমার বিশ্বাস বার্তা২৪কে বলেন, ‘স্থলবন্দরটির আগের সচলতা এখন আর দেখা যায় না। আমদানি সুবিধা পেলে আবারো বন্দরটি সচল হবে। এতে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা পাবে কাজের নিশ্চয়তা। পাশাপাশি সরকারও বিপুল পরিমান রাজস্ব পাবে।’