গাইবান্ধায় ছাত্রদের 'জনতার বাজার', সবজির সঙ্গে কম দামে মিলছে মাংসও

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আয়োজিত "জনতার বাজারে" কম দামের সবজির পাশাপাশি গরুর মাংসও বিক্রি করছেন ছাত্ররা।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে সবজির পাশাপাশি আজই প্রথম এই গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন তারা। প্রতি কেজি মাংসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২০ টাকা। যা স্থানীয় বাজারে তুলনায় কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কম।

বিজ্ঞাপন

গাইবান্ধা শহরের জিরো পয়েন্টে (পুরাতন জেলখানা মোড়) ছাত্রদের এই কম মূল্যের জনতার বাজার। যেখানে জেলার গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা-সাঘাটা, গাইবান্ধা-বালাসি ও গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়ক এসে মিলিত হয়েছে।

সকাল ১০টার দিকে জেলা শহরের পুরাতন জেলখানা মোড়ে ছাত্রদের "জনতার বাজারে" গিয়ে দেখা যায়, সবজির দোকানের পাশেই বসানো হয়েছে মাংসের দোকান। সেখানে মাংস ক্রয়ের টোকেন হাতে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে মাংস নিতে অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। বিশৃঙখলা এড়াতে আগেই মাংসের দাম নিয়ে টোকেন হাতে ক্রেতাদের লাইনে দাঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এসময় লাইন ছাড়াও মাংস কিনতে আসা ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এসময় কম দামে মাংস কিনতে আসা বেসরকারি এনজিওতে চাকরিজীবী মিজানুর রহমান বলেন, এখানে বাজারের থেকে ৬০ টাকা কমে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। কম দামে পাওয়ায় এক কেজি মাংস কেনার জন্য টোকেন হাতে দাঁড়িয়েছি।

মিষ্টি ব্যবসায়ী লাল মিয়া বলেন, দেড় কেজি মাংস কিনবো। দাম বাজারের থেকে কম। আমরা চাই ছাত্রদের এই আয়োজন অব্যাহত থাক। বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে আয়োজকদের সকলের সহযোগিতা করা উচিত।

এসময় গাইবান্ধার ছাত্র প্রতিনিধি আবুজর গিফারি রাফি বলেন, গাইবান্ধার জনতার বাজারে আজই প্রথম সবজির পাশাপাশি গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে টাকা ৬২০। স্থানীয় বাজারের থেকে যা কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কম। একজন ক্রেতাকে ২৫০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ দুই কেজি পর্যন্ত মাংস দেওয়া হচ্ছে।


এসময় এক প্রশ্নের জবাবে রাফি জানান, শহরের এক যুবক ব্যবসায়ী আমাদেরকে কোনো ধরণের মুনাফা ছাড়াই গরু ক্রয়ের জন্য ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন। অবশিষ্ট টাকা যোগ করে আমরা ৯৩ হাজার টাকায় স্থানীয় হাট থেকে একটি ষাঁড় গরু ক্রয় করেছি। তবে, ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় মাংস অনেক কম রয়েছে। সকলের সমর্থন থাকলে প্রতি সপ্তাহেই আমাদের মাংস বিক্রির এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে।

বিনা লাভে ছাত্রদের গরু ক্রয়য়ের সিংহভাগ টাকা দেওয়া ব্যবসায়ী যুবক মাহফুজ বলেন, "ছাত্র জনতার সবজির বাজারকে সমর্থন জানিয়ে কোনো মুনাফা ছাড়া গরু ক্রয়ে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখানে ২৫০ গ্রাম মাংসও বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নিম্নবিত্ত মানুষরাও কম দামেই মাংস কিনতে পারবে। মূলত এই কারণেই আমি ডোনেট করেছি।

কাঁচা বাজারের দায়িত্বে থাকা ছাত্র প্রতিনিধি জিসান জানান, শুধু শুক্রবার আমাদের জনতার বাজার খোলা থাকে। তবে যেহেতু আজ গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। সেজন্য সবজির দোকানও চালু রেখেছি।

তিনি জানান, আমাদের জনতার বাজারে স্থানীয় বাজার থেকে ১০ টাকা কমে কুমড়া ৪০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টাকা কমে বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ১৫ থেকে ২৫ টাকা কমে করলা ৪৫ টাকা, ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে মুলা ৩০ টাকা এবং ১৫ থেকে ৩০ টাকা কমে পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। 

গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহামুদ আল হাসান বলেন, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ছাত্ররা তাদের জনতার বাজার শুরু করেছে। মূলত কাঁচাবাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে তাদের এই আয়োজন। আমরাও সেখান থেকে কম-বেশি বাজার করে থাকি। তাদের সার্বিক বিষয়ে আমাদের নজর রয়েছে।

জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ছাত্ররা ন্যায্য মূল্যে সবজি বিক্রি করবে বলে তাদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। যা দিয়ে তারা জনতার বাজার নামক সবজির বাজার শুরু করেছিলো। আজ সেখানে তারা গরু জবাই করেছে। এই কার্যক্রমে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর সকালে গাইবান্ধায় "জনতার বাজারের" উদ্বোধন করেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। সেদিন থেকেই সেখানে সবজি বিক্রি করছে ছাত্ররা। স্থানীয় বাজারে সবজির দাম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন ছাত্র প্রতিনিধিরা।