শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানে যত অভিযোগ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কুড়িগ্রাম | 2023-08-26 03:44:06

সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামেও চলছে শিক্ষার্থীদের করোনা ভাইরাসের টিকা(ফাইজার) প্রদান কার্যক্রম। এক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৮ বছরের শিক্ষার্থীরা টিকার আওতায় আসবেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে ষষ্ঠ শ্রেণীর বেশকিছু শিক্ষার্থীর বয়স ১২ বছরের কিছু কম হওয়ায় তারা টিকা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাদের ক্লাসে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও বৃহস্পতিবার(১৩ জানুয়ারি) দুপুর কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের টিকা-কেন্দ্র ঘুরে ভোগান্তি এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রায় দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকার ২য় ডোজ নেন কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তন্ময়। তিনি জানান, টিকা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন তিনি। অভিযোগ করে বলেন, লাইনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা ছাড়াও লাইনের বাইরে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীরা ঢুকছে। এতে লাইন আরও দীর্ঘ হচ্ছে। এজন্য বেলা ১১ টায় লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুর ১:৪০ মিনিটে টিকা নেই আমি।

হাসপাতালে ছাত্রদের লাইনের তুলনায় ছাত্রীদের লাইন কয়েকগুণ দীর্ঘ। কুড়িগ্রাম সদরের ভোগ ডাঙা ইউনিয়নের লক্ষ্মী কান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোছা. কামরুন্নাহার শিখা দুপুর দেড়টায় জানান, তিনি সকাল ১০ টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এখন লাইনের প্রায় শুরুর দিকে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগেছে তার। এর মধ্যে টানা রোদে দাঁড়িয়ে থাকায় শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করছেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের সাথে আসা ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. বশির উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে আমাকেও খারাপ লাগছে। একসাথে এত শিক্ষার্থীদের না ডাকলেই পারতো। সেই সাথে হাসপাতালে বুথের সংখ্যা বাড়িয়ে ভোগান্তি কমানোর দাবিও করেন তিনি।

হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে গিয়ে আরও দেখা গেছে ছাত্রদের এবং ছাত্রীদের লাইন আলাদা হলেও বেশ কিছু যুবক ছাত্রীদের লাইনের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছেন। এতে ছাত্রীদের পড়তে হচ্ছে নানান বিড়ম্বনায়। মাঝেমধ্যে হঠাৎ করেই ছাত্রীদের লাইনের ভেতর দিয়ে তারা চলাফেরা করছেন। এছাড়াও বিভিন্নভাবে তারা ইভ টিজিং এর শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রীরা।

লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানান, আমাদের লাইনের আশেপাশে এই ছেলেদের থাকার কোন দরকার নাই। তারা আমাদের কাছে এসে উত্ত্যক্ত করছে। একাধিকার প্রতিবাদ করেও কাজ হচ্ছেনা। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ছাত্রীদের সাথে আসা অভিভাবকেরাও। সেই সাথে টিকা প্রদানের ধীরগতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

টিকা প্রদানের কাজে নিয়োজিত এক স্বেচ্ছাসেবক সময় বেশি লাগার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন পরীক্ষা করার পর টিকা কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে একটু সময় বেশি লাগছে।

অপরদিকে ১২ থেকে ১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের নির্দেশনা থাকায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক ৬ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ১২ বছর পূর্ণ না হওয়ায় টিকা নিতে পারছেন না। তাদের অন্যান্য সহপাঠীরা টিকা নিতে পারলেও তাদের টিকা নিতে না পারায় ক্লাসে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

লক্ষ্মী কান্ত উচ্চ।বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. বশির উদ্দিন বলেন, নির্দেশনায় বলা হয়েছে টিকা না নিলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারবেন না। তাই আমার স্কুলের ৬ষষ্ঠ শ্রেণীর কিছু শিক্ষার্থী দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও বয়স কমের কারণ দেখিয়ে তাকে ফেরত দেয়া হয়েছে। এখন সে ক্লাস করতে পারবেনা।

প্রায় দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসা ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী লামিয়া খন্দকার জানান, আমি আমার বান্ধবীদের সাথে টিকা নিতে এসেছি। কিন্তু আমাকে ফেরত দেয়া হলো। এখন আমি আমার ক্লাসে উপস্থিত হওয়া নিয়ে টেনশনে আছি।

টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা এ এস আই আনোয়ারুল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, গতকাল (১২ জানুয়ারি) কুড়িগ্রাম জেলার নয়টি উপজেলায় ১ম ও ২য় ডোজ মিলে মোট ২০ হাজার ৬৫৮ জন শিক্ষার্থীকে করোনার টিকা প্রদান করা হয়েছে। এবং এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ১লক্ষ ১৬ হাজার ৩৯৯৯ জন শিক্ষার্থী টিকার আওতায় এসেছে বলেন জানিয়েছে সিভিল সার্জন অফিস।

অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন মো. মনজুর এ-মুর্শেদ বলেন, ফাইজার এর টিকা অনেক সচেতনতার সাথে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে প্রদান করা হয়। অন্যথায় এর কার্যকরীতা হ্রাস পায়। এজন্য আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক বুথ করেছি। একাধিক বুথের দাবির বিষয়টির সম্পর্কে সহমত পেষণ করে তিনি বলেন, আগামী রবিবার সরেজমিনে পরিদর্শন করে এব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি যাতে পরবর্তীতে না সৃষ্টি হয় সেব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর