বাড়ছে লঞ্চ মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা, কমছে যাত্রী সেবা

, জাতীয়

জহির রায়হান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, বরিশাল | 2023-08-31 03:49:51

বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চল নদী বেষ্টিত হলেও এ অঞ্চলে সড়ক পথে যোগাযোগ উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। তবে সড়ক পথে যোগাযোগে উন্নয়ন ঘটলেও এই অঞ্চলে নৌপথে যাতায়াতই বেশি। বিশেষ করে ঢাকার সাথে। এজন্য দিনে দিনে বেড়েই চলেছে বিলাসবহুল লঞ্চে যাত্রীদের যাতায়াতের চাপ। অন্যদিকে যাত্রীর চাপ বাড়লেও কমেছে যাত্রীসেবার মান।

যাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা, খুন, দায়িত্বে অবহেলা, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নৌ দুর্ঘটনা সহ নানা কারণে দিনে দিনে বাড়ছে লঞ্চ মালিক-স্টাফদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা। এসব মামলা বিচারাধীন থাকলেও শুধরানোর কোন নাম নেই লঞ্চ মালিকদের।

বরিশাল অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে কাগজ কলমে ২২টি লঞ্চের নাম থাকলেও বর্তমানে ১৮টি লঞ্চ চলাচল করছে। এর মধ্যে ৪টি লঞ্চ বর্তমানে চলাচল বন্ধ রেখেছে। এ ছাড়া ১০টি ভায়া লঞ্চ এ রুটে চলাচল করে।

আরও জানা যায়, বর্তমানে বরিশাল অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নৌ আদালতে যাত্রীবাহী কিছু নৌ পরিবহনের বিরুদ্ধে ২১টি মামলা চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ এমভি পারাবত-১০ লঞ্চে ৩টি, এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চে ২টি,এমভি পারাবত-১১ লঞ্চে ১টি, এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চে ১টি, এমভি ফারহান-৮ লঞ্চে ১টি, এমভি মানামী লঞ্চে ১টি, এমভি অ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চে ১টি, এমভি পরাবত-১২ লঞ্চে ১টি, এমভি টিপু-১২ লঞ্চে ১টি মামলা এবং বানারীপাড়া-তরুরবাজার রুটের লঞ্চ এমএল রানা ১টি, ঢাকা-ভান্ডারিয়া রুটের এমভি মনিং সান লঞ্চে ১টি, এমভি বিউটি অব লাইনছরি লঞ্চে ১টি, ঢাকা-চরমোনাই রুটের এমভি কাজল-৭ লঞ্চে ১টি, ঢাকা-বরগুনা ভায়া বরিশাল রুটের এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ১টি মামলা চলমান আছে। এছাড়াও যাত্রীবাহী ট্রলার নওরীন, মিরাজ এক্সপ্রেস, আল আরাফাত ও আল্লাহ ভরসার নামে একটি করে মামলা চলমান রয়েছে।

ছবি: বার্তা২৪.কম

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হতাহতের ঘটনায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও লঞ্চে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হয়নি।

এরকিছুদিন পর ঢাকা থেকে বরিশাল ফেরার পথে সুরভী-৯ লঞ্চের সাইলেন্সার পাইপ থেকে বাষ্পীয় ধোঁয়া বের হওয়ার ঘটনায় যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পরে।

এ সময় যেসব যাত্রীরা ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করে ফেসবুকে দিয়েছিলেন সেই সব যাত্রীদের খুঁজে মারধর করে লঞ্চ স্টাফরা। মারধরের ঘটনায় ছবি তুলতে গেলে বেসরকারী দুই টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিকও মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় আহত ২ সাংবাদিক ও নৌবন্দর কর্মকর্তা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো আইনি পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। যদিও এরপর লঞ্চ মালিক লিখিতভাবে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং অভিযুক্তদের চাকরিচ্যুত করেন সুরভী লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।

সাইফুর রহমান সরদার নামে এক ব্যাংকার বলেন, নদীতে নতুন নতুন লঞ্চ নামানোর প্রতিযোগীতা থাকলেও বাড়েনি যাত্রী সাধারণের কাঙ্খিত সেবা। যে যার মতো লঞ্চ স্টাফরা যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে। কেবিনের যাত্রীদের সাথে কিছুটা ভালো ব্যবহার করলেও ডেকের যাত্রীদের মানুষ বলে মনে করে না স্টাফরা।

ছবি: বার্তা২৪.কম

স্থানীয় গবেষক ও প্রবীন সাংবাদিক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, লঞ্চে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে যাত্রী সাধারণ ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসব সর্তকতা থাকা দরকার তা পুরোপুরি মানছে না লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও প্রতিদিন লঞ্চ ছাড়ার সময় লঞ্চের ফিটনেস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং গ্যাসসিলেন্ডার ব্যবহার না করার প্রতি খেয়াল বাড়তে হবে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষন আর নজরদারী না থাকায় দিনে দিনে বাড়ছে নৌ দুর্ঘটনা । লঞ্চ পরিচালনা স্টাফদের মধ্যে সর্তকতা ও সচেতনতা সৃষ্টি না হলে কোন মামলা দিয়ে যাত্রীসেবা নিশ্চিত এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন এই গবেষক ।

অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, লঞ্চ মালিক ও স্টাফর সব সময়ই সর্তক থাকি । যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। যাত্রীসেবা ব্যাহত না হয়। কিন্তু তারপরও কিছু না কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। তিনি আরো বলেন, লঞ্চ মালিক ও স্টাফদের বিরুদ্ধে কারণ-অকারণে মামলা দায়ের হচ্ছে। আর ইতোমধ্যে লঞ্চ মালিক ও স্টাফদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে সেগুলো মেরিন কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।

ছবি: বার্তা২৪.কম

বরিশাল অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক ও নৌবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নৌ পথে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে আমরা নিষ্ঠা- স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যাত্রী। পাশাপাশি নৌ পথে যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলা পেলে তাৎক্ষণিক যে ব্যবস্থা গ্রহণ করি । আমরা চাই ঢাকা-বরিশাল রুটটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল রুটে পরিণত হোক,পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরে আসুক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর