ভুয়া সনদ দেখিয়ে ঢাবিতে চাকরির অভিযোগ, মিলেছে পদোন্নতিও

, জাতীয়

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 12:50:07

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সাবেক প্রটোকল অফিসার (পিও) আহসানুল কবির মল্লিকের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ দেখিয়ে চাকরি গ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

নিয়োগ বাণিজ্যে রেজিস্ট্রার ভবনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে উপাচার্যের পিও পদ থেকে তাঁকে সরিয়েও দেওয়া হয়।

জানা যায়, ২০১২ সালে নিয়োগ পান মি. কবির। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে ‘প্রার্থীকে সরকার অনুমোদিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হতে কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (ইলেকট্রিক্যাল) পাস হতে হবে এবং সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাসহ কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা থাকতে হবে।’

কিন্তু সেই যোগ্যতা ছিল না। তিনি পলিটেকনিক্যাল কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করেন।

এরপর তিনি তার অধ্যয়নরত কলেজ থেকে অনুমতি নিয়ে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতে ওআইসি পরিচালিত ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে দুই বছর মেয়াদি বিএসসি ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন কোর্স করেন, যা বিএডের মতো একটা কোর্স। তবে নিয়োগের সময় তিনি নিজেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেখান।

২০১২ সালে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে হিসেবে আহসানুল কবির মল্লিক প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের অধীন বিদ্যুৎ বিভাগে যোগদান করেন। এ ছাড়া তার অভিজ্ঞতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে নিয়োগ পান বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রটোকল অফিসার থাকাকালীন প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়মে জড়ান তিনি।

আহসানুল কবির মল্লিক প্রভাব খাটিয়ে শর্ত পূরণ না করেই পান পদোন্নতি। এ বিভাগে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, সহকারী প্রকৌশলী পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত স্নাতক প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং ডিপ্লোমা পাস সহকারী প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট চাকরির কাল ১৫ বছর, তন্মধ্যে সাত বছর সহকারী প্রকৌশলীর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু তার ক্ষেত্রে সেই শর্ত পূরণ হয়নি।

নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠায় তাকে পিও পদ থেকে সরিয়ে পুনরায় বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠনো হয়। নিজ বিভাগে ফিরে আসার পরও তিনি এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তিনি প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যে নির্ধারিত বাসাও নিয়েছেন।

নিয়োগ বাণিজ্যের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী জানান, তার এক আত্মীয়ের চাকরির জন্য আহসানুল কবির মল্লিক তার থেকে বেশ কয়েক লাখ টাকা নিলেও তার ওই আত্মীয়ের চাকরি হয়নি। অথচ তার ওই আত্মীয় নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল। আরেক ভুক্তভোগী জানান, তার এক আত্মীয়ের নিয়োগের জন্য টাকা নিয়েছেন আহসানুল কবির মল্লিক।

এদিকে আহসানুল কবির মল্লিক বলেন, আমার নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করি এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হই। এরপর আমার নিয়োগ হয়। এ সময় তিনি সনদের বিষয়টি এড়িয়ে যান। নিয়োগ বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার যথাযথ অভিজ্ঞতা রয়েছে। এর আগে আমি সংশ্নিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতাম। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার যাবতীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়ায় যোগদান করেছি। আমার আর কিছু বলার নেই।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আহসানুল কবির মল্লিককে তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিয়েছিল। তথ্য গোপন করে চাকরি নিয়েছিল কিনা তা সঠিক জানি না। বিজ্ঞপ্তিতে যা-ই থাকুক, সে যদি তার যা যোগ্যতা আছে তা দিয়ে আবেদন করে আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেয় তাহলে তো তার কোনো দোষ নেই। আর সে যদি তথ্য গোপন করে চাকরি নিয়ে থাকে তাহলে অন্যায় করেছে। তথ্য গোপন করেছিল কিনা খোঁজ নিয়ে দেখব। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি বলেও জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর