অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন চায় ইইউ, মানবাধিকারে উদ্বেগ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 16:24:22

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তাগিদ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পাশাপাশি মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইইউ।

শুক্রবার (২০ মে) ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যৌথ কমিশনের দশম বৈঠকে ইইউর পক্ষ থেকে এমন উদ্বেগ জানানো হয়। বৈঠকে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও ইইউর বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা প্যাম্পোলোনি।

ইইউয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ যে অবস্থান নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে ইইউ।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বলেছে, সরকার তার সংবিধানে বর্ণিত সবার মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরেছে।

সহযোগিতা চুক্তির আওতায় ইইউ ও বাংলাদেশের গৃহীত প্রতিশ্রুতি অনুসারে যৌথ কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকের আগে গত মঙ্গলবার উন্নয়ন সহযোগিতা, বুধবার সুশাসন ও মানবাধিকার এবং বৃহস্পতিবার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক সাবগ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গত ১৩ থেকে ১৭ মার্চ ইইউয়ের জিএসপি ইবিএ ‘ফলোআপ মিশন’ও যৌথ কমিশনকে প্রতিবেদন দিয়েছে।

ইইউ গতকালের বৈঠকে জোর দিয়ে বলেছে, সক্রিয় নাগরিক সমাজ গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ইইউ বাংলাদেশে মানবাধিকারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইইউ বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রতিবেদনে এবং এ ধরনের লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইইউ বাংলাদেশে নাগরিকদের সুযোগ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের উদ্দেশ্য ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলা এবং এই আইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়ার ওপর ইইউ জোর দিয়েছে।

ইইউয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যৌথ কমিশন উভয় পক্ষের রাজনৈতিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্বসহ গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সুশাসনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছে। বাংলাদেশ ও ইইউ সংখ্যালঘুদের অধিকারের অগ্রগতি, নারী ও শিশুদের অধিকার এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে মানবাধিকারের বিষয়ে সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে।

ইইউ তার ‘এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ)’-এর আওতায় অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য ব্যবস্থার (জিএসপি) সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হিসেবে বাংলাদেশের অব্যাহত সাফল্যের প্রশংসা করেছে। এই সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রম অধিকারসহ মানবাধিকারের শর্তের কথা ইইউ স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ইইউ বলেছে, বাংলাদেশে শ্রম অধিকারের মানদণ্ডের টেকসই সংস্কার এবং আইন ও বিধানগুলো আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সনদের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রেক্ষাপটে ইইউ শ্রম খাতে বাংলাদেশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্তকরণ ও প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছে। এর পাশাপাশি ইইউ বাংলাদেশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী বড় পরিসরে বাস্তবায়ন, অগ্রগতি বিষয়ে নির্দিষ্ট সময় পর পর তথ্য জানানো এবং রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে প্রযোজ্য শ্রম আইন সংশোধন করার সময়সীমা এগিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ নিরাপদ ও সবুজ কারখানায় বিনিয়োগের জন্য ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষ একটি পূর্বাভাসযোগ্য এবং টেকসই ব্যাবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টির গুরুত্বের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। ইইউয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্বাভাসযোগ্য এবং টেকসই ব্যাবসায়িক পরিবেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সহজ হবে, বাজারে প্রবেশের বাধা দূর করবে এবং এর অর্থনীতির টেকসই বহুমুখীকরণ উৎসাহিত করবে। এই লক্ষ্যে, ইইউ ও বাংলাদেশ ব্যবসা পরিবেশ নিয়ে সংলাপ চালিয়ে যেতে এবং আরো জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যৌথ কমিশন ইউরোপে অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাতে ইইউ-বাংলাদেশ ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির’ প্রেক্ষাপটে যৌথ প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছে। ইইউ ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে এবং ইইউতে থাকার অযোগ্য বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে আরো দৃঢ় ফলাফল অর্জনে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেছে।

চার বছরেরও বেশি সময় ধরে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে ইইউ। এর পাশাপাশি তারা রোহিঙ্গাদের, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগের ওপর গুরুত্ব দেয়। উভয় পক্ষই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য, সহযোগিতা ও পরিষেবা অব্যাহত রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।

বৈঠকে উভয় পক্ষ এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন ও জাতিসংঘ ফোরামের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ছাড়া ইইউতে ‘দক্ষতা ও প্রতিভা’ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইইউ এ ক্ষেত্রে অংশীদারির জন্য বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তির কথা জানিয়ে বলেছে, এটি আইনসম্মত অভিবাসনের বিষয়ে অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে একটি নতুন এবং আরো কৌশলগত সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর