বহুমাত্রিক মহাত্মা কাঙাল হরিনাথের জন্মবার্ষিকী আজ

, জাতীয়

এসএম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া | 2023-08-29 12:05:03

গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও বহুমাত্রিক মহাত্মা কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ১৯০তম জন্মবার্ষিকী আজ।

বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি, নারী শিক্ষা ও সাংবাদিকতায় তাঁর পদচারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সৃষ্টি তৎকালীন সামাজিক মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছিলেন।

১৮৩৩ সালের আজকের এই দিনে নদীয়া জেলার (বর্তমান কুষ্টিয়া) কুমারখালী উপজেলার কুন্ডুপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

কাঙাল হরিনাথ ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বাউল গান রচয়িতা। তার প্রকৃত নাম হরিনাথ মজুমদার, কিন্তু কাঙাল হরিনাথ নামেই তিনি সমাধিক পরিচিত। কাঙাল ফিকিরচাঁদ বা ফিকিরচাঁদ বাউল নামেও পরিচিত ছিলেন।

হরিনাথ ছিলেন ফকির লালন শাহ-এর শিষ্য। তিনি আধ্যাত্মবাদ প্রচারের জন্য ১৮৮০ সালে ‘কাঙাল ফিকির চাঁদের দল’ নামে একটি বাউল দল গঠন করেন। বাউল গানের ক্ষেত্রে হরিনাথের অবদান বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি বহুসংখ্যক বাউল গান রচনা করেন এবং সেগুলো খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি সহজ ভাষায় ও সহজ সুরে গভীর ভাবোদ্দীপক গান রচনা করতেন এবং সেগুলো সদলে গেয়ে বেড়াতেন।

গ্রামের সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য এবং তাদের শোষণ-পীড়নের বিরুদ্ধে হরিনাথ সারাজীবন আন্দোলন করেছেন। অত্যাচারিত এবং অসহায় কৃষক সম্প্রদায়কে রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি সাংবাদিকতা পেশাগ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় লিখতেন, পরে ১৮৬৩ সালে তিনি নিজেই গ্রামবার্তা প্রকাশিকা নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি পরে পাক্ষিক ও শেষে এক পয়সা মূল্যের সাপ্তাহিকে পরিণত হয়। এতে সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও কৃষকদের প্রতি তখনকার নীলকর ও জমিদারদের শোষণ-অত্যাচারের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হতো। ফলে ব্রিটিশ সরকার এবং স্থানীয় জমিদারদের পক্ষ থেকে তাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু তিনি নির্ভীকভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করে যান। এসব কারণে পত্রিকাটি তখন বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে।


জানা গেছে, শৈশবে স্থানীয় ইংরেজি স্কুলে হরিনাথের লেখাপড়া শুরু হয়। আর্থিক কারণে তা বেশিদূর অগ্রসর এগোয়নি। ১৮৫৫ সালে বন্ধুদের সহায়তায় নিজ গ্রামে একটি ভার্নাকুলার স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। গ্রামের সাধারণ লোকদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে সেখানে অবৈতনিক শিক্ষকরূপে শিক্ষকতা শুরু করেন হরিনাথ। পরের বছর তারই সাহায্যে কৃষ্ণনাথ মজুমদার কুমারখালিতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

হরিনাথের জীবনে কখনও সচ্ছলতা ছিল না, কিন্তু তা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের সুবিধার্থে তিনি ১৮৭৩ সালে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। রাজশাহীর রাণী স্বর্ণকুমারী দেবীর অর্থানুকূল্যে দীর্ঘ ১৮ বছর পত্রিকা প্রকাশের পর আর্থিক কারণে এবং সরকারের মুদ্রণ শাসনব্যবস্থার কারণে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে হয়।

কাঙাল হরিনাথের পঞ্চম বংশধর দেবাশীষ মজুমদার বলেন, কাঙালের বংশধরেরা খুব অসহায়। কেউ খোঁজ নেয়না তাদের। কাঙাল কুটির ও সমাধি সংরক্ষণ এবং কাঙালের সকল দিবস জাতীয়ভাবে পালনের দাবি জানান তিনি।

রেফুল করিম বলেন, উনবিংশ শতাব্দীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলকাতায় নারীদের নিয়ে যে আন্দোলন করছিলেন সে সময় কুমারখালী শহরে নারীদের শিক্ষার জন্য একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার স্মৃতি রক্ষার্থে কাঙাল হরিনাথের নামে সড়ক, ভবন সহ স্থাপনার দাবী জানান তিনি।

কুমারখালী কাঙাল হরিনাথ স্মৃতিজাদুঘরের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ওবাইদুল্লাহ বলেন, কাঙাল হরিনাথের ১৯০তম জন্মদিনটি নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে জাদুঘরে পালন করা হবে।

তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিকালে কুমারখালী কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘরের সভাকক্ষে কবিতা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর