রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী উপজেলা দোহার ও নবাবগঞ্জ। কৃষি ও পর্যটন শিল্পে সরকারি সহায়তা পেলে দ্রুত পাল্টে যেতে পারে এই অঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র।
স্থানীয়দের দাবি, উপজেলা দুটির অর্থনীতিতে কৃষির অবদান ব্যাপক। সারা বছর এখানকার কৃষকরা উৎপাদন করছেন নানা জাতের ধান, শাকসবজি, পাটসহ আদা, হলুদ, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ধনিয়া, সরিষা, তিল। এছাড়া পেপে, কলা, কুল, বেল, লেবু, লিচু, আঁতাফল, আমড়া, জাম, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফল।
অন্যদিকে মহাকবি কায়কোবাদের জন্মস্থান খ্যাত নবাবগঞ্জের আগলা গ্রাম, কলাকোপা ও বান্দুরা এলাকায় ও দোহারের পদ্মার তীরবর্তী মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনটঘাট। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন এলাকা।
আর এই পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে এই এলাকার জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন সচেনতন মহল।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নবাবগঞ্জের কলাকোপা ও বান্দুরা এলাকাজুড়ে রয়েছে নানা প্রাচীন নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। যা দেশ বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খেলারাম দাতার বাড়ি, যা খেলারাম দাতার কোঠা বলেও পরিচিত।
পেশায় ডাকাত হলেও ডাকাতি করা লুণ্ঠিত সম্পদ সাধারণ জনগণের মাঝে বিলিয়ে দিতেন বলে তার নাম হয় খেলারাম দাতা। ধারণা করা হয় বাড়িটি পূর্বে চার তলা ভবন ছিল, যা ধীরে ধীরে মাটিতে দেবে গিয়ে বর্তমানে শুধু দোতলা রয়েছে। বাড়িটি শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কলাকোপার জর্জবাড়ি ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি, যা ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকে স্থানীয় হিন্দু জমিদার সুদর্শন রায় নির্মাণ করেন। কলাকোপায় আরও আছে ব্যবসায়ী রাধানাথ সাহার বাড়ি, লোকনাথ সাহার বাড়ি (মঠবাড়ি বা তেলিবাড়ি), মধু বাবুর পাইন্নাবাড়ি, পোদ্দারবাড়ি, কালীবাড়ি।
জর্জবাড়ির পাশে ভগ্নপ্রায় বাড়িটির নাম কোকিল পেয়ারী জমিদার বাড়ি। এই বাড়িটির সামনে একটি মন্দির আছে। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাড়ির প্রতিটি অংশজুড়ে খেলা করছে আলো-ছায়া।
কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির ডান দিকের চিকন পথ ধরে একটু সামনের দিকে এগুলেই হাতের বামে পড়বে তেলেবাড়ি। ইছামতি নদীর কোল ঘেঁষে এই তেলেবাড়িটি এখন আনসার ও ভিডিপি ক্যাম্প। প্রচলিত আছে, এই বাড়ির মালিক লোকনাথ তেল বিক্রি করে ধনী হয়েছিলেন বলে বাড়িটির এই নাম।
মাহাত্মা গান্ধির অহিংস আন্দোলনের সাক্ষি গান্ধির মাঠ। গান্ধিজি বৃটিশ বিরোধি আন্দোলনের সময় এই অঞ্চলে এসেছিলেন এবং এখানে সভা করেছিলেন। সেই থেকে এই মাঠটির নাম গান্ধির মাঠ।
মহাকবি কায়কোবাদের জন্মস্থান নবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি। রয়েছে জপমালা রাণীর গির্জা, বান্দুরা ভাঙ্গা মসজিদ, বান্দুরার হাসনাবাদ গির্জা যা সকলকে আকৃষ্ট করে।
গত কয়েক বছরের ব্যবধানে কলাকোপায় আধুনিক শিশুতোষ পার্ক গড়ে উঠেছে। আরো একটি পার্ক নির্মাণের চেষ্টা চলছে বলেও জানা যায়।
দোহারের জয়পাড়া এলাকার বাসিন্দা ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা কমরেড করম আলী বলেন, ‘কৃষি ও প্রবাসী অধ্যুসিত নবাবগঞ্জ ও দোহারের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারে কৃষি ও পর্যটন। এর জন্য স্থানীয় শিল্পপতি ও সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
নবাবগঞ্জের বাসিন্দা কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, ‘এখন অনেক স্থানীয় উদ্যোক্তা পর্যটন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তবে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগ।’
সড়ক পথে রাজধানীর গুলিস্থান থেকে নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর মাত্র ৩৩ কিলোমিটার ও দোহারের জয়পাড়া ৩৮ কিলোমিটার। যার ফলে সল্প ব্যয়ে নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায় কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে রাজধানীসহ সারাদেশে বিপনণ করার সুবিধা রয়েছে।