একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় পারুল বেগমকে গণধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে 'যৌন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীজোট'।
শুক্রবার (০৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করে তারা।
মানববন্ধনে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, 'নোয়াখালীর সুবর্ণচরের এই ঘটনা আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনাগুলোর একটা৷ যে দেশের জন্মের পেছনে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ নারীর ইজ্জত আছে, সেই দেশে মুক্তিযুদ্ধের সরকার যখন ক্ষমতায়, তখন তার দলের লোকদের হাতে প্রতিপক্ষকে ভোট দেওয়ার কারণে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারে, এটা কল্পনা করা যায় না৷ যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, আমি তাদের মৃত্যুদণ্ড এবং এই ব্যাপারে আইনের যে অপ্রতুলতা রয়েছে, তা সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি ৷'
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'গোটা দেশ ইতোমধ্যে জানে, যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের লোক৷ স্বীকার করুন, আপনাদের দলের লোকেরা ঘটনাটা ঘটিয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে দল ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেন৷ তাদের সবাইকে যেন গ্রেফতার করা হয় এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যেন অনতিবিলম্বে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি সুনিশ্চিত করুন৷ তাহলেই আমরা বুঝব, এটা আপনাদের দলের পলিসি নয়৷ এটা কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পলিসি হতে পারে না৷ স্থানীয় পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসন রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ধর্ষককে আড়াল করার চেষ্টা করেছে৷ সেই অপরাধে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা না হলে ভবিষ্যতের প্রশাসকেরাও এভাবেই ধর্ষককে আড়াল করার জন্য ব্যবস্থা নিতে থাকবেন।'
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন- যৌন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীজোটের আহ্বায়ক শিবলী হাসান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএলের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহজাহান আলী সাজু, লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট মারুফ রসূল, সংস্কৃতিকর্মী সানজিদা কাজী, হিল উইমেনস ফেডারেশনের সদস্য রূপসী চাকমা প্রমুখ।
শিবলী হাসান বলেন, 'বিচারহীনতা ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমাদের দেশে আক্রান্তরা অপরাধের বিচার পান না৷ ফলে অপরাধের ক্ষেত্র তৈরি হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে ধর্ষণের শিকার পূর্ণিমা রাণী শীলের কথা আমরা ভুলে যাইনি৷ সেই সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি-জামায়াতের সরকার সেই ঘটনার বিচার করেননি৷ নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মধ্য-যুগীয় কায়দায় ধর্ষণের যে ঘটনাটি ঘটেছে, প্রগতির কথা বলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সেটি ঘটিয়েছে৷ তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই৷ এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হবে না৷'
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ায় ভোটের দিন রাতে ওই নারীকে স্বামী-সন্তানসহ বেঁধে রেখে পিটিয়ে আহত এবং তাকে গণধর্ষণ করে নৌকার সমর্থকরা।