বিমান হবে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক

ঢাকা, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, ঢাকা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 15:10:56

গতকাল ৪ জানুয়ারি ছিল বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭২ সালের ওই দিনে বিমানের পথ চলার সূচনা। স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে ভেবেছিল তাদের একটি নিজস্ব এয়ারলাইন্স হবে। সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ১৯ দিনের মাথায় তার চেতনাকে ধারণ করে জন্ম নেয় এ সংস্থা। তাই স্বাধীনতা, বিমান ও বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা।

১৯৭২ সালে বিমানের যাত্রা শুরু হয়েছিল ডাকোটা উড়োজাহাজ দিয়ে। আর সর্বশেষ গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ও ৫ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এর বহরে সংযুক্ত হয় বিশ্বের সর্বাধুনিক বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার। এখন বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫টি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ‘গাঙচিল’ ও ‘রাজহংস’ নামে আরও দুটি ড্রিমলাইন বহরে যুক্ত হবে।

২০০৮ সালে বোয়িং ও বিমানের মাঝে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যে ১০টি নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ ক্রয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর থেকে ড্রিমলাইনার সংযোজনের দিনটির জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। 

২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিমানের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। বিপর্যস্ত শিডিউল, জরাজীর্ণ বিমান বহর, অন্তহীন অভিযোগে বিমান মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এ সংকট উত্তরণে প্রয়োজনীয় কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু হয়। সত্যিকার অর্থে সর্বাঙ্গসুন্দর একটি এয়ারলাইন্স হিসেবে বিমানকে গড়ে তোলার জন্য বিমান পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরের ইতিহাস সবার জানা। বিশ্বখ্যাত বোয়িংয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে নতুন জাহাজ সংগ্রহের দিন-ক্ষণ এগিয়ে আনা হয়।

তারই ধারাবাহিকতায় একের পর এক বিমান বহরে সংযুক্ত হয়েছে পালকি, অরুণ আলো, আকাশপ্রদীপ, রাঙ্গাপ্রভাত, মেঘদূত ও ময়ূরপঙ্খী।

বিশালাকারের অত্যাধুনিক জাহাজগুলি আকাশের বিস্ময় এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ গন্তব্য সমূহে বিমানের কানেকটিভিটি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার গত বছরের আগস্টে কানাডার সঙ্গে ০৩টি ড্যাশ-৮ বোম্বারডিয়ার উড়োজাহাজ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। এছাড়াও ০১টি ড্যাশ-৮ কিউ৪০০ ও ০২টি ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ লিজ গ্রহণের কার্যক্রম চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে চুক্তিবদ্ধ ০১টি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ এবং ২টি লিজে সংগৃহীত বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ বিমান বহরে যোগদান করবে বলে বিমান সূত্রে জানা গেছে।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দিক আহমদ জানান, ২০১১ সালে বিমান বহরে প্রথম বোয়িং 777-300ER উড়োজাহাজ যোগদানের পূর্বে বহরে মোট ০৮টি উড়োজাহাজের গড় বয়স ছিল ২০ বছরের বেশি। নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বহরে যোগ দেয়ার পর থেকে অবস্থার ক্রমান্বয়ে উন্নতি হতে থাকে। বর্তমানে লিজে সংগৃহীত উড়োজাহাজের বয়স ৭ বছরেরও কম এবং বিমানের নিজস্ব ০৮টি উড়োজাহাজের গড় বয়স ৩.৭ বছর।

বিমানের ডিরেক্টর (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) আশরাফুল ইসলাম জানান, বহরের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিমানের বাণিজ্যিক পট পরিবর্তনও হয়েছে। উপর্যুপরি লোকসানের পর ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে বিমান পর পর ০৩ বছর মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ সংযোজনের পর থেকে ক্রমান্বয়ে বিমান যাত্রী সেবার মান উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে প্রতিযোগিতাপূর্ণ এভিয়েশন বাণিজ্যে একটি যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিমানের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরও জানান, সম্প্রসারিত এই বহর দিয়ে বিমানের চলমান রুটসমূহে ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন গন্তব্য হিসেবে গোয়াংজু, কলোম্বো এবং মালে-তে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

বিমানের জিএম (পিআর) শাকিল মেরাজ জানান, বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশে একমাত্র গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট। তারা নিজস্ব ফ্লাইট পরিচানার পাশাপাশি বাংলাদেশ ফ্লাইট পরিচালনাকারী সকল বৈদেশিক বিমান সংস্থার ফ্লাইটসমূহের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রদান করে থাকে। এই খাতটিতে নানাবিধ সীমাবদ্ধতা আছে। তবে ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। গত এক বছরে এই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগের মাধ্যমে ৬৯টি নতুন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মান উন্নয়নে বিমানবন্দরে ৭ শতাধিক নতুন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও বিমান বাংলাদেশ গত ১০ বছরে নতুন আঙ্গিকে নিজেদের ঢেলে সাজিয়েছে। প্রায় ০৭ বছর স্থগিত থাকার পর ২০১৫ সালে বিমান অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। বিমানের টিকিট বিক্রয়ে পূর্ণ অটোমেশন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। নতুন নতুন গন্তব্যে ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিমানের ফ্লাইটসহ তথ্যসমূহ সম্মানিত যাত্রীদের অবগতির জন্য ০১ অক্টোবর, ২০১৫ থেকে এসএমএস সেবা চালু হয়েছে। ০৭ মে, ২০১৮ থেকে বিমানের কলসেন্টার চালু করা হয়েছে। বিমানের জন্য ১০ বছরের একটি ফ্লিট প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিমান হয়ে উঠেছে সবার আস্থা ও গৌরবের প্রতীক।

বিমান ও পর্যটন সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ‘সরকার জনকল্যাণে নিরন্তর ভাবে কাজ করে চলেছে । প্রবাসে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১০ মিলিয়ন বাংলাদেশির আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমরা সম্মান জানাই। বহরে নতুন জাহাজ যুক্ত হওয়ার পর এখন নতুন নুতন গন্তব্যে বিমান উড়ে যাবে বলে আশা রাখি। বিমান ব্যবস্থাপনা সে লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর