শ্রমিকদের অভিবাসন বাড়লেও কমছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা | 2024-01-31 19:41:45

সাম্প্রতিককালে শ্রমিকদের অভিবাসন বাড়লেও দিন দিন কমছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। এক জরিপে দেখা গেছে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে অভিবাসন ১৩ শতাংশ বাড়লেও রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র ২.৮৮ শতাংশ।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি ২০২৩ অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার এবং ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. তাসনিম সিদ্দিকী এসব তথ্য তুলে ধরেন।

ড. তাসনিম সিদ্দিকী লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স এসেছে ২১.৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে রেমিটেন্স বেড়েছে মাত্র ২.৮৮ শতাংশ। গত বছর রেমিটেন্স এসেছিলো ২১.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে যে পরিমান বাংলাদেশী শ্রমিক অভিবাসন করেছেন সে পরিমানে বাড়েনি রেমিটেন্স। এ বছর অভিবাসন বেড়েছে ১৩ শতাংশ আর রেমিটেন্স বেড়েছে মাত্র ২.৮৮ শতাংশ।

তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশ ছিলো সৌদি আরব যা এ বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশে নেমে এসেছে। সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২.৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, (১৪.৯৭ শতাংশ)। গত বছরের তুলনায় সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৩.৯ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, এই বছর (২০২৩) সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩৬.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা মোট রেমিটেন্সের ১৬.৭৬ শতাংশ। যা গত বছর ছিলো তৃতীয় অবস্থানে। এবছর দেশটি থেকে রেমিটেন্স প্রেরণের হার ৪.৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এবছর (২০২৩) তৃতীয় অবস্থানে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (২৬.৮০ বিলিয়ন, ১২.২৩ শতাংশ) যা গত বছর ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। এর পরের দেশগুলো যথাক্রমে যুক্তরাজ্য (২৫.৩৬ বিলিয়ন, ১১.৫৭ শতাংশ) এবং কুয়েত থেকে (১৫.০৭ বিলিয়ন ডলার, ৬.৮৭ শতাংশ) ও ইতালি থেকে (১৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার, ৬.১০ শতাংশ) রেমিটেন্স এসেছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে দেশে অভিবাসন বেড়েছে সেই দেশ থেকে রেমিটেন্স বাড়েনি। যেমন এ বছর সৌদি আরবে অভিবাসন বাড়লেও রেমিটেন্স বেড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।

২০২৩ সাল জাতীয় নির্বাচনপূর্ব বছর হওয়ায় অভিবাসনের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বছর হবে জানিয়ে তাসনিম সিদ্দিকী লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিএমইটি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জন বাংলাদেশী কর্মী কাজের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন। যা গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে ১১ লাখ ৩৫ হাজর ৮৭৩ জন বাংলাদেশী কর্মী অভিবাসন করেছিলেন। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৪৮ বছরের মধ্যে এ বছর বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ অভিবাসন হয়েছে।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বাংলাদেশের অভিবাসন খাত হুমকির মধ্যে পড়েছিলো উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তবে ২০২২ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের হার আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। করোনা মহামারির সময় সে সকল অভিবাসী বিদেশে যেতে পারেননি, ২০২২ ও ২০২৩ সালে তারা অভিবাসন করেছেন। এছাড়াও কোভিড-১৯ এর পরে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য অভিবাসী গ্রহণকারী দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু হওয়ায় চাকরির বাজারও উন্মুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি সব ধরনের সৌদি প্রতিষ্ঠানে অভিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য নির্ধারিত কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করার ফলে অভিবাসন বেড়েছে। তবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে নয় প্রতিটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ থেকেই ২০২২ সাল থেকে অভিবাসন বেড়ে চলেছে।

২০২৩ সালে মোট ৭৬ হাজার ৫১৯ জন নারী কর্মী কাজের জন্য বিদেশে গেছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। অর্থ্যাৎ ২০২২ সালের তুলনায় নারী অভিবাসন প্রবাহ এই বছর ২৭.৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ বছরে মোট আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ৫.৮৬ শতাংশ হলেন নারী কর্মী যা গতবছর ছিলো ৯.৩ শতাংশ। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রেও নারী অভিবাসন ৩.৪৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

এছাড়াও বিগত বছরের প্রবণতা অনুযায়ী ২০২৩ সালেও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসী সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে অভিবাসন করেছেন ৪ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন যা মোট অভিবাসনের ৩৮.১২ শতাংশ।

এসময় ড. তাসনিম সিদ্দিকী ৬টি সুপারিশও তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে —

২০২৫-২০৩৫ সালকে অভিবাসন দশক ঘোষণা করা; শ্রম অভিবাসন এবং ডায়াস্পোরার জন্য দুইটি দিবস পালন না করে সকল অভিবাসীর জন্য জাতিসংঘ ঘোষিত ১৮ ডিসেম্বরকেই সকল অভিবাসীর দিবস হিসেবে পালন করা হোক। ১৮ ডিসেম্বর পালনকে ‘গ’ তালিকাভুক্ত করার বদলে ‘খ’ তালিকাভুক্ত করা; রাজনৈতিক ইশতেহারে অভিবাসীদের বিষয়ে যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছে তার জন্য নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করা হোক; অনলাইনে অভিযোগের যে ব্যবস্থা দীর্ঘকাল ধরে চালু ছিল তা দ্রুত ফিরিয়ে আনা; আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনকে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জলবায়ু অভিযোজনের পথ হিসেবে চিহ্নিত করা হোক। এক্ষেত্রে বিভিন্ন জলবায়ু বিষয়ক ফান্ডগুলো হতে বিশেষ ঋণ প্রকল্প গ্রহণ করা; এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের স্রোত ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোর প্রতি অভিবাসীদের আস্থা বাড়াতে হবে। স্বল্পমেয়াদী অভিবাসীদের বিভিন্ন বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে হবে এবং তা গনমাধ্যমে ও সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার করা।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩ সালের ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা, ২০২৩ সালে আইন ও নীতির ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো সাধিত হয়েছে তার বিবরণ, আন্তর্জাতিক আইন ও সিভিল সমাজের প্রতিষ্ঠানসমুহের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা। এছাড়াও ছিলেন রামরুর পরিচালক (প্রোগ্রাম) মেরিনা সুলতানা, প্রজেক্ট ম্যানেজার রাবেয়া নাছরীন এবং প্রজেক্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ ইনজামুল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর