উৎসবের আমেজেই চলছে বাংলা ও বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৪। প্রতি বছরের মতো এবারও বইমেলায় প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে নতুন ও পুরাতন লেখকদের বই। গল্প, উপন্যাস, কাব্য, সায়েন্স ফিকশন, শিশুতোষ বইসহ নানা রকম বই নিয়ে লেখকগণ বিভিন্ন প্রকাশনীর মাধ্যমে তাদের বই নিয়ে আসছেন পাঠকদের জন্যে। তবে পাঠকগণ যেন পুরাতন নামকরা লেখক ও কবি সাহিত্যিকদের বই থেকে নজর সরাতেই পারছেন না। নতুন অথবা তরুণ লেখকদের বই পাঠকগণের মনে এখনো সাড়া জাগাতে পারেনি।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিলে জানা যায়, বাঙালি পাঠকগণের উপন্যাস, প্রবন্ধ, গল্প, কাব্যগ্রন্থের চাহিদা এখনো পুরাতন লেখকদের বই ই বেশি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, আহমদ ছফা, হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ জনপ্রিয় লেখকগণের বই পাঠকদের পছন্দের শীর্ষে।
কথা প্রকাশ এর স্টলে গিয়ে জানা যায় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর 'সাতচল্লিশের দেশভাগে গান্ধী ও জিন্নাহ', হরিসংকর জলদাস এর সীতা' বই দুটি এই অব্দি সর্বাধিক বিক্রি হয়েছে।
মাওলা ব্রাদার্স স্টল সূত্রে জানা যায়, সরদার ফজলুল করিম এর 'প্লেটোর সংলাপ', 'আহমদ ছফার যদ্যপি আমার গুরু' বইগুলো পুরাতন হলেও পাঠকগণ এই অব্দি এই বই দুটোই সবচেয়ে বেশি কিনেছেন।
তাম্রলিপি স্টল সূত্রে জানা যায়, এ বছর ড.জাফর ইকবাল এর নতুন কোন বই বের হয় নি। তবুও পাঠকগণ এখনো তার বই ই খুঁজছেন। পাঠক তার সব ধরনের বইয়েরই খোঁজ করছেন।
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড এর বিক্রয় কর্মকর্তা মো. শামীম জানান, ড.আসিফ নজরুল ইসলাম এর শেয়ারিং গংগাস ওয়াটার, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার শেপাই এবং রেহমান সোবহানের দুইটি বই পাঠকগণ বেশি খুঁজছেন এবং কিনছেন।
অন্য প্রকাশের স্টল সূত্রে জানা যায়, কথা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর নতুন কোন বই তো নেই তবুও তার লেখা সব ধরনের বই এই স্টলে অধিক বিক্রি হচ্ছে।
প্রথমা স্টল সূত্রে জানা যায়, আনিসুল হকের 'কখনো আমার মা কে', আসিফ নজরুল এর আমি আবু বকর, আনু মুহাম্মদ এর অর্থ শাস্ত্র বই অধিক বিক্রি হয়েছে।
একই চিত্র দেখা গেছে কাব্যগ্রন্থের স্টল গুলোতেও। 'চারুলিপি' স্টলে গিয়ে বই বিপণন কর্মীদের বরাতে জানা যায়, কবিতাপ্রেমি পাঠকগণ এই স্টলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্সহ পুরাতন কবিদের বই ই কিনছেন। নতুন কবির বই খুব কমই বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়াও বৈভব, অক্ষর প্রকাশনীসহ বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থের স্টলে খোঁজ নিয়েও দেখা গেছে পুরাতন কবিদের বইয়ের দাপট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লেখক বার্তা ২৪.কমকে জানান, প্রকাশকগণ নতুন লেখকের বই ছাপাতেই চান না। নিজের টাকা থেকে অধিকাংশ টাকা দিয়ে বই ছাপিয়েছি। প্রকাশকরা আমাদের বই নিয়ে প্রচারও চালায় না।
এ ব্যাপারে বইমেলার বই বিপণন কর্মীগণ জানান, কোন লেখক নতুন বই লিখলে তার জন্যে বিশেষ কোন প্রচারের ব্যবস্থা থাকে না। বিভিন্ন প্রচারণায় তাদের বইয়ের প্রচ্ছদ ব্যবহার করা হয় না। তবে তারা ব্যাক্তিগত পেইজ থেকে যতটুকু পারছেন প্রচার করছেন।
তবে ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যায় সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার ও শিশুতোষ বইয়ের স্টল গুলোতে। তরুণ ও নতুন লেখকগণের বইয়ের সেখানে দারুণ চাহিদা রয়েছে।চমক হাসান এর নিবিড় গণিত, রাগীব হাসানের গবেষণায় হাতেক্ষড়ি বইগুলো ইতমধ্যে সাড়া জাগিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিকেল চারটায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জফির সেতু। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শাহিদা খাতুন এবং সৌমিত্র শেখর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবদুল খালেক।