গৃহকর্মীর মৃত্যু: ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক ও তার স্ত্রীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ

, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-02-11 11:00:28

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার শাহজাহান রোডে বহুতল ভবন থেকে ফেলে প্রীতি উরাংয়ের (১৫) মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারে থাকা ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

এ সময় তাদের কাছে প্রীতি সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদে বারবার গৃহকর্মী নির্যাতনের কারণ জানতে চেয়েছে পুলিশ।

বিশেষত নবম তলায় গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের ঝুলে থাকার পর মৃত্যুর কারণ জিজ্ঞাসা করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, এ মৃত্যুর ছয় মাস আগে সাত বছর বয়সী ফেরদৌসী নামে আরেক গৃহকর্মী একইভাবে আট তলা থেকে পড়ে যাওয়ার রহস্য উদ্ঘাটন করতে চেয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদে আদালত অনুমতি দিয়েছিলেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে আটক করা হয়। পরদিন আদালতে সোপর্দ করলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ও শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

একই বাসায় বারবার কেন গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে এবং এর নেপথ্যে কী, তা বের করার জন্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মারা যাওয়া কিশোরী গৃহকর্মীকে কেন হাত বেঁধে বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল, তারও ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে গৃহকর্তা আশফাক ও গৃহকর্ত্রী তানিয়ার কাছে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির কারণে অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। তারা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের জেনেভা ক্যাম্প সংলগ্ন একটি ভবনের নবম তলা থেকে পড়ে মারা যায় গৃহকর্মী প্রীতি উরাং (১৫)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পড়ে যাওয়ার আগে বেশ কিছুক্ষণ জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে ছিল প্রীতি। এরপর ওই ভবন থেকে নিচে পড়ে যায়। মেয়েটা পড়ার পর অনেক লোক ভিড় করেছে। দ্রুত ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের বিষয়টি জানানো হলেও তারা প্রথমে দরজা খুলতে চাননি। যখন ওপর থেকে মেয়েটা পড়ে যায়, পাশের ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আনাসসহ আরও কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মেয়েটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ সময় স্থানীয়রা ওই বাড়ির ফটকে জড়ো হয়ে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ আশফাক, তানিয়াসহ তাদের পরিবারের ছয়জনকে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুজনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং।

আলোচিত এই ঘটনায় নিহত প্রীতির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাদিয়া। প্রতিবেদনে নিহত প্রীতির শরীরে নতুন ও পুরনো কিছু দাগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার প্রশ্ন- ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাকুল হকের বাসার ভেতরে কী এমন ঘটনার অবতারণা হয় যে শিশু গৃহকর্মীরা নবম তলা থেকে পড়ে যায়? বাসায় কি তাদের শারীরিক, মানসিক কিংবা যৌন নির্যাতন করা হয়? নাকি শিশুদের ফেলে দেওয়া হচ্ছে?

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট সাংবাদিক সৈয়দ আশফাকুল হকের এই বাসা থেকেই ফেরদৌসী নামে এক গৃহকর্মীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তখনও আশফাকুল, তানিয়া খন্দকার ও আসমা আক্তার শিল্পী নামে এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর