চুয়াডাঙ্গায় ৭ বছরের মেয়েকে হত্যার দায়ে মা গ্রেফতার

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চুয়াডাঙ্গা | 2024-05-06 15:22:55

চুয়াডাঙ্গায় নিজের ৭ বছর বয়সী মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে মা পপি খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পপি খাতুন কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী ও চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোগাইল বগাদী গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে। গত রোববার (৫ মে) সকালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিশু মাইশার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করেন তার মা পপি খাতুন ও স্বজনরা। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ওই শিশুর মৃত্যু বিদ্যুতস্পৃষ্টে নয়, বরং শ্বাসরোধে হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান। পরে ওই শিশুর মাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজের মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে সোমবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

পুলিশ সুপার বলেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে শিশু মাইশা খাতুন (৭) তার নানার বাড়িতে মোবাইল চার্জারের তার গলায় জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়েছে, এমন ইতিহাস নিয়ে ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজন তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে সকাল ১০টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওই শিশুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

মৃত কন্যাসন্তানের মা পপি খাতুন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে, এমন তথ্যসম্বলিত একটি লিখিত অভিযোগ করলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওই দিন রাতে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করেন। অতঃপর অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমান জুয়েল রানা কর্তৃক এই কন্যাশিশু সন্তানের মৃত্যু বিষয়ে ঘটনাস্থল থেকে নানা ধরণের নেতিবাচক তথ্য পান।

মেয়েটির দুর্ঘটনামূলক মৃত্যু নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে, তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। এরই মাঝে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ দাফনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশ সুপারের মৌখিক নির্দেশে ওই কন্যাশিশু সন্তানের মৃত্যুটি হত্যাজনিত না দুর্ঘটনামূলক, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কর্তৃক সুনির্দিষ্ট মতামত গ্রহণের জন্য ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে মর্মে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করেন। অতঃপর ওই শিশুর নানা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে আলমডাঙ্গা থানায় গত ৩ মে একটি খুন মামলা রুজু হয়।

রোববার (৫ এপ্রিল) সকালে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান ওই শিশুর বাড়ি পরিদর্শন করেন। এসময় মৃত শিশু মাইশার মা পপি খাতুনের কথা-বার্তায় সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি স্বেচ্ছায় এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হলো? তার কোনো সহযোগী ছিল কিনা?- এসব প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বলেন যে, তিনি নিজেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

পুলিশ সুপার আরও জানান, ওই শিশুর মা পপি খাতুনের পূর্বাপর পারিবারিক ব্যক্তি জীবন, বৈবাহিক জীবন অতঃপর বিবাহ বিচ্ছেদ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি পাওয়া গেছে যা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশ সুপার বলেন, এই মামলায় পপি খাতুন বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, ডিআও-১ আবু জিহাদ ফখরুল আলম খানসহ পুলিশের কর্মকর্তারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর