ফারুকের বাগানে শতাধিক জাতের আঙুর, জাপানের সূর্য ডিম আম

, জাতীয়

কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম | 2024-05-16 15:46:31

বাগানের চারদিকে নিরাপত্তা বেস্টনি। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই ভেতরে কি চাষ হচ্ছে। প্রবেশের শুরুতেই চোখে পরে উন্নত জাতের মাল্টার বাগান। কিছুদুর এগিয়ে যেতেই দেখা যায় বাগানে ঝুলছে বাহারী রঙের আঙুর। দুপাশের উঁচু বেডের মাঝ দিয়ে পানি দেয়ার নালায় আগাছা পরিষ্কার করছেন এক দিনমজুর। তারও কিছুদুর এগোতে চোখে পরে হরেকরকম জাতের আম। কোনটি লম্বা, কোনটি গোলাকার, কোনটি আবার জাপানের বিখ্যাত সূর্য ডিম আম।

বিদেশি কোন বাগানের গল্প নয় এটি। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা বেলগাছা ইউনিয়নের হরিরাম গ্রামের যুবক আবু রায়হান ফারুক নিজ বাসার পেছনের কয়েক বিঘা উঁচু জমিতে গড়ে তুলেছেন এই বাগান। বেশিদিন পুরোনোও নয় এটি। ২০২০ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান থেকে অনার্স শেষ করার পর উদ্যোগ নেন এমন বাগানের। জমি প্রস্তুত করে ২০২২ সালে রোপণ করেন মাল্টা, আঙুর ও বিদেশি কিছু জাতের আম। সেগুলো দুই বছরের মাথায় এখন ফলন দেয়া শুরু করেছে। মোটামুটি ভালো অঙ্কের বিনিয়োগের পর এখন লাভের অঙ্ক গুনতে শুরু করেছেন ফারুক।


বুধবার (১৫ মে) দুপুরে এই বার্তা২৪.কম এর এই প্রতিবেদককে বাগানটি ঘুরে দেখান বাগানটির উদ্যোক্তা আবু রায়হান ফারুক।

আবু রায়হান ফারুক বলেন, আমি ২০২২ সালে এক বিঘা জমিতে আঙুর চাষ শুরু করি। ২০২৩ সালে কিছু জাতে ফলন পাই । এবছর প্রায় শতাধিক জাতের মধ্য থেকে  ৪০ টিরও বেশি জাত থেকে ফলন পেয়েছি। এই আঙ্গুল ফুলের যে কালার এবং কোয়ালিটি, আমরা বহির্বিশ্ব থেকে যে আঙুর গুলো আমদানি করে আনছি সেগুলোর তুলনায় কিন্তু এগুলো একই রকম। আমাদের দেশেও এগুলো সম্ভব। সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে যুবককেরা আঙুর চাষে সফল হতে পারে। এতে বেকারত্ব যেমন দূর হবে, তেমনি আমাদের ফলের চাহিদা আমাদের দেশেই পূরণ করা সম্ভব। আঙুরের পাশাপাশি আমার বাগানে কয়েক জাতের মাল্টা, ডালিম, লটকন এবং ১৫ টির মতো বিদেশি জাতের আম রয়েছে। দুই বছরের মাথায় আমি মাল্টা এবং আম থেকে ফলন পাচ্ছি।


তিনি আরও বলেন, ফল বিক্রির পাশাপাশি আমি আঙুরের চারা বিক্রি করে থাকি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমাকে প্রায় প্রতিদিনই কুরিয়ার করে পাঠাতে হয়। আশা করছি এই বছরে এই বাগান থেকে ফল ও চারা মিলে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারব। কোন ব্যক্তি যদি এমন বাগান করতে চান তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করলে তাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করার চেষ্টা করবো।

ফারুকের বাগান দেখতে প্রায় প্রতিদিনই ঘুরতে আসেন দর্শনার্থীরা। এমনি একজন ঘুরতে আসা যুবক সালমান দিদার আজমী বলেন, আমি এখানে এসে খুবই অভিভূত। আমার বন্ধু কষ্ট করে এই বাগানটি দাঁড় করিয়েছে। কুড়িগ্রামের মাটিতে আঙুরের এমন চাষ হয় সেটা এখানে আসলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়া টাটকা আঙুর ও বিদেশি অনেক জাতের ফল কেনার সুযোগও এখন আমরা পাবো।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি কুড়িগ্রামের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ফারুক একজন তরুণ উদ্যোক্তা। সে আঙুরের পাশাপাশি মাল্টা এবং আম চাষ শুরু করেছে। কুড়িগ্রামের আবহাওয়া আঙুরের ফলন কেমন হয় এটির জন্য আমরা ফারুকের আঙুর বাগানের খোঁজখবর নিচ্ছি। যদি ভালো ফলাফল পাওয়া যায় তাহলে আমরা কুড়িগ্রামে সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করবো। এজন্য তাকেও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর